রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরিতে কাজ করবে মিয়ানমার

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 16:12:32

রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরিতে বাংলাদেশে আসবে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। তারা রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে ঘুরে দেখবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের সার্বিক অবস্থা জানাবে এবং তাদের আস্থা তৈরিতে কাজ করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল গত ৯ থেকে ১১ আগস্ট মিয়ানমার সফর করেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সফরকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন পরিদর্শন করে, তাদের প্রস্তুতি দেখেন।

প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আবুল কালামসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গঠিত যৌথ কার্যকরী কমিটির (জেডাব্লিউজে) সদস্যরাও ছিলেন।

হেলিকপ্টারে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ঘুরে উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো দেখেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।

সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ইতোমধ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে মিয়ানমার। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি শুরু হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একসঙ্গে কাজ করবে। এই প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে দুই পক্ষের মন্ত্রী পর্যায়ে হটলাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা সরাসরি কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের পরিচিতি যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় রয়েছে। সেগুলো দুই দেশই দেখবে। তবে এ ক্ষেত্রে দুই দেশ নিজ নিজ খরচ বহন করবে।

এদিকে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহযোগিতায় মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। যারা বাড়িঘর পাবেন না, তাদের নগদ অর্থ ও বাড়ির নির্মাণসামগ্রী দেওয়া হবে। তারা নিজের বাড়ি নিজেরা তৈরি করে নেবেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর, প্রথমে তাদের অস্থায়ী নিবাসে রাখা হবে। তবে একমাসের মধ্যে তাদের স্থায়ী নিবাসে স্থানান্তর করা হবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন অস্থায়ী নিবাসে রাখা যাবে না। তারা বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করেছে, একমাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের স্থায়ী নিবাসে রাখা হবে।

রোহিঙ্গাসহ রাখাইন রাজ্যের সব জাতিগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পর তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে চায় মিয়ানমার সরকার। তবে শুধু রোহিঙ্গা নয়, রাখাইন রাজ্যের সব জাতিগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য তারা কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়া তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি এম. দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে দুই পক্ষ রাজি হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা সেখানকার পরিস্থিতি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন কাজ দ্রুতই শুরু হবে। তারা আমাদের জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ঘর বাড়ি, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, উপাসনালয় তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে সোমবার (৩ সেপ্টেম্বের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় মিয়ানমার সফরের সার্বিক বিষয় অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য রাখাইন এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণ হয়েছে। এজন্য মিয়ানমার সরকার ৪২টি জায়গা নির্ধারণ করেছে। সেই জায়গাগুলোও তাদের দেখানো হয়েছে।

এছাড়া তারা তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সার্বিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার সরকারের সার্বিক পরিস্থিতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখে এসেছেন। আশা করছি, শীঘ্রই তারা প্রত্যাবর্তন শুরু করবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য ক্যাম্প তৈরি ও বর্ডার পর্যায়ে অভ্যর্থনা কেন্দ্র তৈরি করা হবে। সেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মানুষ রাখা যাবে। প্রথমে ক্যাম্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হবে। এরপর তাদের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সেখানে থেকে তাদের যে বাসস্থানে রাখা হবে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমারের রাখাইনে শুরু হওয়া নৃশংসতার পর এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হন। এর বেশিরভাগই মুসলিম। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় গত বছরের নভেম্বরে। তার অধীনে ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, তা এখনো হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর