পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে চাকরি প্রত্যাশী নারীর অনশন

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর | 2023-08-30 11:22:31

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে অনশন করছেন মৌমিতা পলি নামের এক নারী। গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ১৫ লাখ টাকা নিয়েও তাকে নিয়োগ দেননি। অনশনে এমন অভিযোগ করেছেন মৌমিতা।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মৌমিতা ও তার মা হোসনে আরা শহীদ মিনারে বসে অনশন শুরু করেন। মৌমিতা পলি গাংনী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দীন আহম্মেদ বাহাদুরের ছেলে।

তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মৌমিতার বাবার বাড়ি সংলগ্ন তার মালিকানাধীন ৫ কাঠা জমি ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়েছিল। এর সাথে চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই।’

অনশনরত মৌমিত পলি অভিযোগে বলেন, ‘গাংনী পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পদে চাকরির জন্য তিনি আবেদন করেন। ২০১৮ সালের ১৯ মে পৌরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার অংশ গ্রহণের জন্য পত্র পান মৌমিতা। নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অংশ গ্রহণ করেন। এর আগেই চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র আশরাফুল ইসলাম তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। সহকারী কর আদায়কারী পদে ঘুষের বিনিময়ে চাকরির জন্য মৌমিতা ও মেয়রের মধ্যে মৌখিক গোপন চুক্তি হয়।’

টাকা দেওয়ার বিষয়ে মৌমিতা জানান, পরিবারের লোকজনের সাথে নিয়ে আশরাফুল ইসলামের হাতে নগদ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন ২০১৭ সালের শেষের দিকে। পরবর্তীতে মেয়রের স্ত্রী শাহানা ইসলামের নামীয় ইসলামী ব্যাংক মেহেপুর শাখায় ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন তিনি। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি ৫ লাখ ৭০ হাজার, ২৫ জানুয়ারি ৫০ হাজার এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পৃথক তিনটি রসিদ দেখান মৌমিতা ইসলাম।

এদিকে, অনশনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৌমিতা। এ সময় তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার পর মেয়র তাকে পৌরসভায় দিন হাজিরা ভাতায় (মাস্টাররোলে) চাকরি দেন। বেশ কিছু দিন মাস্টাররোলে কাজ করেন। সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগপত্র না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পৌরসভায় যাওয়া বন্ধ করে দেন। বারবার মেয়রের কাছে ধরনা দিয়েও চাকরি কিংবা টাকা না পেয়ে অনশন ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে জানান দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মৌমিতা পলি।

টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন করবেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ঘুষের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র আশরাফুল ইসলাম জানান, নাটোরের এক ব্যক্তির সাথে মোবাইলে প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে করেন মৌমিতা। পিতার বাড়ি ছেড়ে মৌমিতার পিতার বাড়িতে চলে আসার কথা ছিল তার স্বামীর। এজন্য পিতার বাড়ির পাশে একটি বাড়ি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন মৌমিতা ও তার স্বামী। মৌমিতার পিতার বাড়ি লাগোয়া মেয়রের নিজ নামীয় ৫ কাঠা জমি কেনার জন্য বায়না দেয়। যা মেয়রের স্ত্রীর ব্যাংক হিসেবে দেন মৌমিতা।

পরবর্তীতে স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে সে মৌমিতার পিতার বাড়িতে আসেননি। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় জমি কেনার টাকা ফেরত নেন মৌমিতার স্বামী।

পৌর মেয়র আরও জানান, মৌমিতা মাস্টাররোলে প্রায় ছয় মাসের কর্মকালীন সময়ে পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে অসদারণ করেন। এতে বাধ্য হয়ে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন মৌমিতা। অপরদিকে সামনে পৌরসভার নির্বাচন কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মৌমিতার এ ক্ষোভ পুঁজি করে অনশনে বসিয়েছে বলে দাবি করেন পৌর মেয়র।

মৌমিতার অনশনের বিষয়টি গাংনী থানা অবগত হয়েছে উল্লেখ করে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান বলেন, থানায় মৌমিতা কোন লিখিত অভিযোগ দেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর