সন্তানের পিতৃপরিচয়ের আকুতি ধর্ষণের শিকার প্রবাসীর স্ত্রীর

, জাতীয়

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর | 2023-08-26 16:09:06

৯ মাস ৫ দিন আগে প্রতিবেশী দেবরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক প্রবাসীর স্ত্রী। বিচার পেতে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী স্থানীয় মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। ৪ হাজার টাকা ‘ঘুষ’ দিয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন। ৩৭ দিন অতিবাহিত হলেও অভিযুক্তকে ধরতে অনীহা রয়েছে পুলিশের। ধর্ষণে গর্ভবতী ওই তরুণী অবশেষে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এখন ফুটফুটে সন্তানটির পিতৃপরিচয়ের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

গত বছরের ১৭ নভেম্বর কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের ভিকারটেক (ফকির বাড়ি) এলাকার স্বামীর ফাকা বাড়িতে সদ্য মা হওয়া ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন প্রতিবেশী দেবর ফয়সাল (২২)। তিনি ওই এলাকার সিএনজি চালক ফিরোজের ছেলে।

ওই তরুণীর বড় ভাই ইমান হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, শনিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নরসিংদীর মনোহরদী সেন্ট্রাল হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তার বোন। এখন মা-ছেলে দুজনই সুস্থ আছেন। তার স্বামী দুই বছর ধরে দেশের বাইরে। যে কারণে এ সন্তানের জনক তিনি নন।

ভুক্তভোগী তরুণী বার্তা২৪.কম-কে জানান, ভিকারটেক (ফকির বাড়ি) এলাকার দুবাই প্রবাসী মো. আবুল কাশেমের সঙ্গে ২০১৮ সালের ২০ জুন পারিবারিকভাবে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে তার বিয়ে হয়। বিয়ের ১ মাস পরই স্বামী সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান। পরে বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণের জন্য তার নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্ট চালু করতে চাইলে স্বামী আপত্তি জানান। পরবর্তীতে স্বামীর চাচাত ভাই ফয়সালের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন আবুল কাশেম। সেই টাকা পৌঁছে দিতে নানা কারণে প্রায় সময় বাড়িতে এসে কু-প্রস্তাব দিতেন ফয়সাল।

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শ্বশুর-শাশুড়ি নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে ননদের বাড়িতে বেড়াতে যান। ওই দিন সন্ধ্যায় তার দেবরও বাজারে গেলে তিনি বাড়িতে একা অবস্থান করেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে অভিযুক্ত ফয়সাল বাড়িতে আসে। তিনি বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা প্রসঙ্গে কথা বলতে ঘরে ঢুকেন। বাড়িতে কেউ নেই বুঝতে পেরে ফয়সাল তার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। বিষয়টি প্রকাশ করলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভয় ও মান সম্মানের কথা চিন্তা করে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে ফয়সাল সুযোগ বুঝে তাকে আরও ৩-৪ বার ধর্ষণ করেন। গর্ভবতী হওয়ার পর তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ফয়সালকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হলে সে দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে ভয়ে তিনি বাবার বাড়ি বানারকান্দি এলাকায় চলে যান। বিষয়টি স্থানীয় মাতব্বরদের জানালে তারা গ্রাম্য সালিশ করে সুরাহা করে দেওয়ার কথা বলে সময় নষ্ট করেন। উপায় না পেয়ে গত ১৭ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কাপাসিয়া থানায় মামলা (নম্বর ১৮) করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার ফি হিসেবে কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই মো. জামাল মিয়াকে প্রথমে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এই টাকা পেয়ে তিনি সন্তুষ্ট হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। পরে অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর তদন্তে যাওয়ার কথা বলে আরও ১৭০০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। এরপর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পুলিশ তাকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে এক নারী কনস্টেবলের হাতে পরীক্ষা বাবদ ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’

ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন কথা বলে পুলিশ ১০ হাজারের বেশি টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়েছে। এরপরও আসামি গ্রেফতার করছে না। গ্রেফতারের কথা বললে আসামিকে ধরিয়ে দিতে বলেন এসআই জামাল মিয়া। আসামির অবস্থান জানালেও পুলিশ যায় না বরং আসামির অবস্থান পুলিশকে জানালে অভিযুক্ত ফয়সালকে আর সেখানে পাওয়া যায় না। এতে করে মনে হয়, আসামি পক্ষের কাছ থেকে পুলিশ সুবিধা নিয়েছে। আর পুলিশই তাকে সরিয়ে দিচ্ছে।

সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন জানিয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণী বার্তা২৪.কম-কে আরও বলেন, ‘আমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় চাই।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমি নির্যাতিতা হয়েও বিচার পাইনি। এখন আমার সদ্যজাত সন্তান কী তার পিতৃপরিচয় পাবে না।’

এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর আসামি ধরতে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েছি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।’

অভিযুক্ত ফয়সালের মা মাসুদা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ফয়সাল কাপাসিয়ার হাইজোরে অবস্থিত সরকারি তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকেই সে পলাতক। ফয়সাল নির্দোশ। সে যদি সত্যিই অভিযুক্ত হয়ে থাকে তাহলে একজন নারী হিসেবে আমিও তার বিচার চাই।’

বাদীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পর মামলা নিয়েছি। বাদীর অভিযোগগুলো যাচাইয়ের পর যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাদী যেহেতু সন্তান প্রসব করেছে, এখন আমরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠাব। আইনগত প্রক্রিয়ায় যা আছে আমরা সব করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর