ভঙ্গুর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৫০ বছরের পুরনো মন্দির

, জাতীয়

জুয়েল রানা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-09-01 19:59:29

প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কাচারী পয়রাডাঙ্গা এলাকার ভবানী পাঠকের মঠ। কেউ কেউ শিবমন্দির, কামাক্ষা মাতা ঠাকুরনী মন্দির আবার কেউ কেউ জয় দূর্গাদেবী চৌধুরানীর আস্তানাও বলে থাকে।

স্থানীয়দের বেশিরভাগ মানুষ এই মঠকে মন্দির হিসেবেই জানে এবং এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে পূজা অর্চণা করে আসছে। কিন্তু কবে নাগাদ এটি তৈরি করা হয়েছিল তা জানা নেই স্থানীয়দের।

কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৭৭০ থেকে ১৭৭২ সালের মধ্যে এই শিবমন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। সে সময় ফকির মজনু শাহের সহযোগী ভবানী পাঠক শিব ন্দিরটি নির্মাণ করেন। ভবানী পাঠক ছিলেন রংপুরের পীরগাছা এলাকার মন্থনার জমিদার জয় দূর্গাদেবী চৌধুরানীর নায়েব। ভবানী পাঠকের বাড়ি ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠক পাড়ায়।

ইতিহাস গ্রন্থ সূত্রে আরও জানা যায়, ১৭৬০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত পলাশীর যুদ্ধের পর এই মন্দির থেকেই ভবানী পাঠকের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সন্নাসীরা। এজন্য এটিকে ভবানী পাঠকের মঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার কাচারী পায়রাডাঙ্গা গ্রামে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে অবহেলায়-অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রাচীন মন্দিরটি। মন্দিরের উপরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ডাল-পালা মেলে আছে। ক্ষয়ে গেছে দেয়ালের ইটও। মন্দিরের ভেতরে রাখা আছে দেবী মূর্তি।

যেকোনো সময় মন্দিরটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে এখন আর তেমন পূজা অর্চণা করছেন না স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষজন। স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর আগে জঙ্গলের ভেতর থেকে মঠটি আবিষ্কার করেন স্থানীয়রা। তারপর থেকেই সেখানে পূজা অর্চণা চলে আসছে। তবে সংস্কারের অভাবে বর্তমানে এই মন্দিরের অবস্থা একেবারের ভঙ্গুর হয়ে পড়ায় কয়েক বছর ধরে ভয়ে আর কেউ মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করছেন না।

ইট বালু ক্ষয়ে গেলেও এখনো পূজা-অর্চনা করেন হিন্দু ধর্মাাবলম্বীর

স্থানীয় নিতাই চন্দ্র সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মন্দিরটি বহু যুগ ধরে এ অবস্থায় আছে। আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে আমরা শুনেছি এটা নাকী দেবী চৌধুরানীর আখড়া ছিল। তারপর সন্নাসীরা এসে এখানে পূর্জ-অর্চণা করত। এখন পূর্জা-অর্চণা কিছু হয়। তবে আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি সংস্কার হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো হত এবং আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে উপকৃত
হতাম। এটা সংস্কার করার জন্য অনুরোধ করছি। কেউ সংস্কার করে দিলে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।’

স্থানীয় শিক্ষার্থী চঞ্চল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘অনেক পুরনো এই মন্দিরটি সরকারিভাবে সংস্কার করা হলে এখানে ভালোভাবে পূজা করা যেত। অনেক মানুষ এখানে আসত। এটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারত। আমরা এই মন্দিরটি সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিসয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। আমাকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। এই মন্দির যদি অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে তাহলে অবশ্যই
সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর