ধুঁকছে রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁ!

, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 09:12:52

করোনাভাইরাসের প্রকোপে ধস নেমেছে রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। সাধারণ ছুটিতে একটানা বন্ধ ছিল প্রায় সব হোটেল-রেস্তোরাঁ। এখন সেই স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুললেও মিলছে না ভোজন রসিক। মালিকরা বলছেন, পুরোটা লোকসান দিয়ে টিকে আছেন তারা। যদি আর দুই/এক মাস এভাবে চালাতে হয়, তবে ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবেন।

সরেজমিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, শাহবাগ, বাংলামোটর মোড়ে অবস্থিত হোটেল রেস্তোরাগুলো ঘুরে দেখা যায়, খাবার খেতে আসা কাস্টমার নেই বললেই চলে। যারা আসছেন তারা কোনো কারণে খাবার ব্যবস্থা না করতে পেরে হোটেল-রেস্তোরায় ঢুঁ মারছেন।

এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকপক্ষ বলছেন, যদি ১০০ ভাগ ধরি সে ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ খাবার খেতে আসছেন। এমন অবস্থায় আমাদের হোটেল খোলা রাখতে দিন দিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। যেখানে ঈদের পরে পুরোদমে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো খোলা রেখেছি।

মোহাম্মাদপুরে অবস্থিত বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ আনোয়ার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগে আমাদের হিসাব হত মাসব্যাপী কিন্তু আমরা এখন প্রতিদিন বাজার করছি এবং চেষ্টা করছি বাজারগুলো ওই দিনই শেষ করতে। পাশাপাশি কর্মচারীদের বিল পরিশোধ করছি দিনের টা দিনেই। তারপরও দেখা যাচ্ছে দিন শেষে ৫/১০ হাজার টাকা লোকসান গুনছি। আমাদের আরো দুটি রেস্তোরাঁ ছিল, আপাতত ওইগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।

এই ম্যানেজার আরো বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এটিও বন্ধ করতে হবে কেননা হোটেল রেস্তোরায় মানুষ পারতপক্ষে খাবার খেতে আসছে না।

অন্যদিকে ধানমন্ডিতে অবস্থিত মিতালি রেস্টুরেন্টেরও একই অবস্থা। সেখানকার স্বত্বাধিকারী রাসেল মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছি। নিরাপত্তার দিক থেকে আমাদের কোনো কমতি নেই। তবুও ভোজন রসিকদের রেস্টুরেন্টে খেতে আসার কোনো আগ্রহ দেখছিনা। আমাদের ব্যবসা নিন্মমুখী।

স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুললেও মিলছে না ভোজন রসিক

তবে রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি কথা বললেও ক্রেতাদের মনের আছে নানা সংশয়। ধানমন্ডি-১৫ তে অবস্থিত সিক্রেট রেসিপিতে আসা এক অতিথি বলেন, আসলে যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসুরক্ষা থাকুক না কেন, ভেতর থেকে এক ধরনের সংশয় কাজ করে। এজন্যই হয়তো হোটেল রেস্তোরাঁয় মানুষ আসা কিছুটা কমে দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে গেলে হয়তো আবার সবাই রেস্তোরাঁমুখী হবেন।

সবকিছু মিলিয়ে প্রায় দীর্ঘ তিন মাস রেস্তোরাঁ-হোটেল বন্ধ থাকার পর মালিকরা ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠান মালিক। অনেক রেস্তোরাঁয় কর্মচারী ছাঁটাই যেমন হয়েছে তেমনি অনেকেরই মাসিক ভাড়ার টাকা বকেয়া পড়ে আছে কয়েক মাসের।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, পর্যায়ক্রমে হোটেল রেস্তোরা খুলছে কিন্তু সবগুলো রেস্তোরাঁ এখনো খোলেনি। বর্তমান করোনায় এমনি ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না, তার উপর প্রায় ২১ জেলায় বন্যা এবং অতিবৃষ্টি যোগ দিয়েছে। কর্মচারী নাই কাস্টমার নাই। ঢাকা শহর ফাঁকা। তাই আমাদের রেস্তোরাঁর ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যেই অনেক রেস্তোরাঁর মালিক আমাকে জানিয়েছে এই অবস্থায় আর চালিয়ে নিতে পারছে না ব্যবসা। যার একটা রেস্তোরাঁর ৪টা আউটলেট ছিল সে দুটো বন্ধ করে দিয়ে দুটো চালাচ্ছে। অনেক মালিকই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।

রেস্তোরাঁর স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, 'রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা করছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে এসে অনেকেই মাস্ক পরতে চায় না, তারা বলে খেতে এসেছি তো মাস্ক পরবো কেন? এখানে একটু সমস্যা হচ্ছে। সবকিছু মিলে আমাদের ব্যবসা ধুঁকছে।

শুধুই এই সেক্টর না এরইমধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে গেছে৷ কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মকর্তাদের কোন কাজ নেই৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ আর কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা৷

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এই করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখন আর অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে রেস্টুরেন্ট খাতের জন্য  প্রধানমন্ত্রী যে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। এসব ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১২ এপ্রিল সার্কুলার ইস্যু করেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এখনো এটি বাস্তবায়ন শুরু করেনি। এ ঋণ কার্যক্রম ও কর্মচারীদের জন্য যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে এ সেক্টরটা টিকে যাবে। না হলে এর প্রভাব মূল অর্থনীতিতেও পড়বে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর