আমি চাই জনগণ আমাকে ডিস্টার্ব করুক: আসিফ আহমেদ

, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 15:23:46

কর্মক্ষেত্র বৃহৎ না হলেও নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শ্রেষ্ঠ হতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে ডিএনসিসির দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ওয়ার্ডকে ডিজিটাল ওয়ার্ড হিসেবে উপহার দিতে চান তরুণ এই জনপ্রতিনিধি।

নিজের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নিজ অফিসে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি চাই জনগণ আমাকে ডিস্টার্ব করুক, ডিস্টার্ব করলেই তো কাজ করতে পারব'।

বার্তা২৪.কম: আপনার ওয়ার্ডকে কিভাবে গড়তে চান?

আসিফ আহমেদ: আমি নির্বাচনের আগে বলেছিলাম এই ওয়ার্ডটাকে ডিজিটাল ওয়ার্ড করব। আমরা করার ইচ্ছাও আছে। এরইমধ্যে কিছু কাজ শুরু করেছি। এলইডি লাইটের জন্য চেষ্টা চলছে। আমার পরিকল্পনা আছে স্কুল, কলেজে বাচ্চাদের ট্যাব দেওয়া, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তারা পরিশোধ করবে। এছাড়া প্রতিটি বাড়ি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছি। সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাট প্রতি ১০০ টাকা করে চার্জ দিতে হবে। এগুলো পরিকল্পনায় আছে।

বার্তা২৪.কম: ট্যাক্স আদায়ের মিশনে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি?

আসিফ আহমেদ: আমি চেষ্টা করব এই ওয়ার্ড থেকে বেশি ট্যাক্স আদায় করার জন্য। এজন্য আমি ডোর টু ডোর সার্ভিস চালু করব। ট্যাক্স আদায়ের এই অভিযান এক সপ্তাহের জন্য নয়, এক বছরব্যাপী চলবে। আমি চাই সব থেকে বেশি ট্যাক্স আমার ওয়ার্ড থেকেই আসুক। কেননা মেয়র মহোদয় বলেছেন, যে যত ট্যাক্স আনবা আমি তাকে উন্নয়নের জন্য সেই টাকাটাই বরাদ্দ করব। বেশি ট্যাক্স আদায় হলে আমার ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজও বেশি হবে।

অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে যারা ট্যাক্স আদায় করেন তারা অনেক বছর ধরেই চাকরি করেন। ওরা আমাদের সহযোগিতা করছে না। আমাদের সঠিক তথ্য দেয় না। তাদেরকে অনেকভাবে বোঝানোর পরেও লাভ হচ্ছে না। আমি এমনো শুনেছি ৫ তলা ভবন আছে অথচ দেখানো হচ্ছে খালি প্লট। যারা বাসা থেকে ট্যাক্সে আদায় করে তারা নানাভাবে ম্যানেজ হয়ে যায়। আমি এদের সাথে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। উদাহরণ দিয়ে বলেন, জাপান গার্ডেন সিটিতে আমাকে বলা হয়েছে মাত্র ১৬০০ ফ্ল্যাট, অথচ সেখানে আছে প্রায় ২৪০০ ফ্ল্যাট। আমি ১৬০০ বা ২৪০০ বাদ দিলাম। অন্তত দুই হাজার ফ্ল্যাট তো আছে। তারপরেও এতো মিসিং কেন?

এজন্য আমি দুই সময় দিয়েছি সমস্ত বাসার কাগজ চাই। যাদের ট্যাক্সের কাগজ পাব না তাদের নামে রিপোর্ট করে নগরভবনে পাঠাব। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই হবে। তাছাড়া আমি হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ না পেলে কোনো সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করি না।

বার্তা২৪.কম: এই ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। আপনি সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, এখানকার মানুষ কি নতুন কিছু পেল?

আসিফ আহমেদ: রাজনীতিতে এরকম বলাটা একটু 'ডিফিকাল্ট' জিনিস। এখানে সবাইকে খুশি রেখে কাজ করতে হয়। মোহাম্মদপুর চার রাস্তার মোড়ে ৩৫ বছর যে জায়গা অবৈধ দখলে ছিল সেগুলো উচ্ছেদ করেছি। আমি এসে করলাম তাহলে ৩৫ বছর কেনো হল না? আমার যদি ইচ্ছা না থাকত, আমি ভাঙতাম না। সামনে আরো ভাঙবো। সব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করব।

বার্তা২৪.কম: সাধারণত নির্বাচিত হওয়ার পর কাউন্সিলররা একটা নির্দিষ্ট গ্রুপ মেনে চলে, আপনার ক্ষেত্রেও কি তাই?

আসিফ আহমেদ: আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সবগুলো করপোরেট নম্বর দিয়ে রেখেছি। প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা নম্বর দেওয়া আছে। কারো বাসায় যদি মশার ওষুধ না ছিটায় বা ওষুধের জন্য টাকা চায় তাহলে ওই নম্বরে জানাবে, তারা কথা না শুনলে আমাকে পাঠাবে। আমি সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার নম্বর দিয়ে দিয়েছি। আমি বলেছি যখন প্রয়োজন আমাকে ফোন করেন, যেভাবে হোক আমি সাহায্য করার চেষ্টা করব। আমি চাই জনগণ আমাকে ডিস্টার্ব করুক, ডিস্টার্ব করা মানেই আমি কাজ করতে পারব।

বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে আসিফ আহমেদ

বার্তা২৪.কম: মশার ওষুধ নিয়ে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে বরাবরই একটা অভিযোগ ওঠে ঠিকমত ওষুধ দেয় না। এবার কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

আসিফ আহমেদ: আমি একমাত্র কাউন্সিলর মশার তেল, মশার ওষুধ বাসায় রাখি। কারণ আমি এসেই ৫ জনকে বরখাস্ত করেছি। কারণ তারা মশার ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে আমার লোকের কাছে ধরা পড়েছে। আমার উন্নয়ন করার ইচ্ছা না থাকলে মশার ওষুধ বাসায় নিয়ে রাখতাম না। জনগণের সেবা করার জন্য এসেছি। আমি চেষ্টা করছি জনগণের পাশে থেকে সেবা করার জন্য। আমি বলেছি মশার ওষুধের জন্য যদি কেউ টাকা চায় সাথে সাথে জানান।

বার্তা২৪.কম: অভিযোগ আছে আপনার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অনেকে আপনাকে ভয়ে কিছু বলে না?

আসিফ আহমেদ: পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমি যদি চোর হই, আমার বাবা বলবে না চুরি করতে, আমি যদি ভালো না হই আমার বাবা বলবে না তুমি ভালো হও। তাদের কথা আমার ক্যারিয়ার আমি কিভাবে গড়ব। চুরি করব সামনে আগাতে পারব না। রাজনীতি হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। ব্যবসাতেও যেমন চ্যালেঞ্জ থাকে, রাজনীতিতেও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। এমন কাজ করব না যেটা নিয়ে বিতর্ক হবে, যেটায় দলের বদনাম হবে।

বার্তা২৪.কম: কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ফুটপাত দখল করে ব্যবসার অভিযোগ ওঠে। আপনার এলাকাতেও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মোড় হতে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তার অনেকাংশ দখলে থাকা এরা কারা?

আসিফ আহমেদ: ওখানে দোকানদের বললেই বলবে কাউন্সিলর করাচ্ছে। আমার নামটাই আগে আসে। যারা অভিযোগ করে তাদের বলেছি কাউন্সিলরকে না বলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। কাউন্সিলের ব্যাপারে অভিযোগ করলে সরাসরি হেড অফিস থেকে আসবে। আমি যদি দুর্নীতিবাজ হয়ে থাকি আমি অ্যারেস্ট হব। আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ যদি না থাকে তাহলে তো কিছু বলতে পারবে না। অনেকে ফোন দেয় আপনার নামে এটা করা হচ্ছে। সম্প্রতি থানা থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছে একটা ঘটনার বিষয়ে। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করেছে। আমি বলে দিয়েছি আমার নাম বিক্রি করলে সাথে সাথে অ্যাকশন। আমি থানায় কম যাই। সমস্যা থাকলে থানায় যাব। সমস্যা না থাকলে থানায় কেন যাবো। আমি থানায় যাই না সুপারিশও করি না। বলে দিয়েছি সবই যদি কাউন্সিলর খায়, কাউন্সিলরের তো অনেক কিছু হয়ে যাবে। কাউন্সিলর তো বদনাম করতে আসে নাই, সুনাম কামাতে এসেছে।

বার্তা২৪.কম: দখলদার কারা? তারা কি বেশি শক্তিশালী?

আসিফ আহমেদ: আসলে যে রোডের কথা বলা হচ্ছে সেখানে করোনার কারণে আমরা অনেকটা ছাড় দিয়েছিলাম। সেই ছাড় দেওয়াই আমার জন্য খারাপ হয়েছে। আজ উচ্ছেদ করলে আবার দেখা যাবে কাল দখল করে বসে আছে। তাছাড়া দলীয় ব্যাপার-সেপার থাকে। দলীয় লোকজন কিছু দোকান দিতে চায়। অনেক সময় বলি আচ্ছা ঠিক আছে তুমি দুইটা ভ্যান বসাও রাস্তার পাশে চাপায়া বসাও। অনেক সময় দেখা গেছে সেই দুইটা থেকে ৫০টা হয়ে গেছে। চার রাস্তার মোড়ের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খালি করে দিয়েছিলাম, দখলদাররা আবার দখলে নিতে চাচ্ছে। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মেয়র মহোদয়কে বলেছি স্থায়ী সমাধানের জন্য। এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যদি আমাকে সহযোগিতা করে আর একটু সময় দেয় তাহলে আমি অবশ্যই একটা পরিবর্তন এনে দিতে পারব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর