খেয়াল খুশি নির্ভর এলপিজির কোয়ালিটি

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 11:43:00

বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের দামের লাগাম ধরার যেমন কেউ নেই, তেমনি কোয়ালিটির বিষয়েও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কোম্পানিগুলো তাদের খেয়ালখুশি মতো মিশ্রণ (প্রোপেন ও বিউটেন) বাজারে ছাড়ছে।

রান্নার কাজে বহুল ব্যবহৃত এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) প্রোপেন ও তুলনামূলক অধিক দাহ্য বিউটেন উপাদানে গঠিত। কিন্তু এই দু’টি উপাদানের রেশিও কতো হবে তার বিষয়ে বিধি নিষেধ নেই। একেক কোম্পানি একেক মাত্রা মিশ্রণ করে বাজারে ছাড়ছে বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র জানিয়েছে। কোম্পানিগুলো যে যার ইচ্ছা মতো মিশ্রণ দিয়ে থাকে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড তাদের বাজারজাতকৃত এলপি গ্যাসের প্রোপেন ও বিউটেনের অনুপাত দিচ্ছে যথাক্রমে ৪০ ও ৬০ শতাংশ। বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো এলপি গ্যাসে ফিপটি ফিপটি। বসুন্ধরা, ওমেরা, পেট্রোম্যাক্স, টোটাল, বিএম এলপি গ্যাস, এনার্জিপ্যাকের জি গ্যাস, লাফ্স গ্যাস, ইউরোগ্যাস, ইউনিভার্সাল, যমুনা ও সেনা এলপিজি যথাক্রমে ৩০ অনুপাত ৭০ হারে বাজারজাত করছে। এখানে বিষয়টি পুরোপুরি বিশ্বাস ও আস্থার উপর নির্ভরশীল। কোন কোম্পানি রেশিও কতো দিচ্ছে তা পরীক্ষা করার কোনো ল্যাব নেই বাংলাদেশে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানে কোনো কোম্পানি যদি দুষ্টু বুদ্ধি ব্যবহার করে। তারা যদি সিলিন্ডারে বাতাস ভরে মার্কেটে ছাড়ে কিছুই করার নেই। উন্নত বিশ্বে হিটিং ভ্যালু দিয়ে এলপিজির দর নির্ধারণ হয়। আমাদের মতো ওজন দিয়ে খুব কম দেশেই হয়।’

টোটাল গ্যাসের ম্যানেজার (অপারেশন) প্রকৌশলী মহিউদ্দিন মো. মাহতাব বার্তা২৪.কমকে জানান, এলপিজি তরল অবস্থায় থাকে। তরল থেকে ভ্যাপারে বার্ন করা হয়। বিউটেনের অনুপাত খুব বেশি হলে ভ্যাপারাইজড হবে না। আবার প্রোপেনের মাত্রা বেশি পরিমাণে দেয়া হলে সিলিন্ডারে প্রেসার বেড়ে যায়। এতে ঝুঁকি বেশি থাকে। ত্রিশ-সত্তর অনুপাতে প্রেসার থাকে ৫ থেকে ৭ বারের মতো। শীত প্রধান অঞ্চলে প্রোপেনের মাত্রা বেশি রাখা হয়। তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে বিউটেন জমাট হয়ে যায়।

বিউটেন অনেক বেশি দাহ্য, এতে কার্বন রয়েছে ৪টি, আর প্রোপেনে কার্বন রয়েছে ৩টি। যানবাহনে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ৪০ অনুপাত ৬০ জরুরি। এর থেকে কমবেশি হলে ব্যবহার অযোগ্য হবে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দিয়েছে। ইদানিং যানবাহনে এলপিজির ব্যবহার বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। এ কারণে এলপিজি ৪০ অনুপাত ৬০ করার বিষয়ে ভাবছে বিইআরসি।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক (বিস্ফোরক) মনিরা ইয়াসমিন বার্তা২৪.কমকে জানান, এলপিজিতে প্রোপেন বিউটেনের রেশিও কতো হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন নেই। তবে বিএসটিআই’র একটি গাইডলাইন রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে বিউটেন ডমিনেট করবে এলপিজি। দাম এবং রেশিও নির্ধারণে একটি কমিটি কাজ করছে, আশা করছি মাস খানেকের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। বিইআরসি অথবা বিএসটিআই’র মাধ্যমে নির্দেশনা জারি হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যানবাহনে যে এলপিজি ব্যবহৃর হচ্ছে, সেই এলপিজিরও প্রোপেন বিউটেন রেশিও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। বিইআরসির সদস্য মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে। সেখানে মন্ত্রণালয়, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, বিএসটিআই’র এক নীতিমালায় বলা হয়েছে এলপিজি ডমিনেট করবে বিউটেন। যে কারণে বাজারে থাকা একেকটি কোম্পানি একেক রকম রেশিও দিচ্ছে। একটি গাইডলাইন তৈরির জন্য কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রাইসিং এবং নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে এলপিজি ব্যবহার ছিল ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। ৯ বছরের ব্যবধানে এ চাহিদা ৭ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ। সরকার অনেকদিন ধরেই আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে। তারা চাচ্ছে জনগণ এলপিজি ব্যবহারে আগ্রহী হোক। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপিজি কোম্পানি লিমিটেড মাত্র ২ শতাংশ মার্কেট পরিচালনা করে। ৯৮ শতাংশ ভোক্তাই বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে।

সবচেয়ে পুরনো ব্র্যান্ড বসুন্ধরা এলপি প্রায় ২৫ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ১৩ শতাংশ বাজার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আজম জে চৌধুরীর ওমেরা এলপিজি, ১১ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিএম এলপি গ্যাস। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে যমুনা এলপি গ্যাস ৯ শতাংশ, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি ৭ শতাংশ, লাফ্স গ্যাস ৬ শতাংশ, টোটাল গ্যাস ৬ শতাংশ, জি গ্যাস ৪ শতাংশ, নাভানা এলপিজি ৪ শতাংশ, বেক্সিমকো এলপিজি ৩ শতাংশ, সেনা গ্যাস ৩ শতাংশ, ওরিয়ন গ্যাস ৩ শতাংশ, ইউনিভার্সাল এলপিজি ২ শতাংশ, ইউরো এলপিজি ২ শতাংশ ও প্রমিতা এলপিজি ১ শতাংশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর