গ্যাজপ্রমকে কাজ দিতে আবারও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 14:52:50

বাপেক্সের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আবারও রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে উচ্চমূল্যে ভোলায় ৩টি গ্যাসকূপ খননের কাজ দিতে যাচ্ছে সরকার।

একেকটি কূপ খননের বিপরীতে মূল্য ধরা হয়েছে ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। যা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স করলে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯ মিলিয়ন ডলারে শেষ করতে পারতো। তারপরও বর্ধিত মূল্যে একের পর এক কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে রাশিয়ার এই কোম্পানিকে। এতে করে একদিকে যেমন বাপেক্সের যন্ত্রপাতি ও জনবল অলস বসে থাকছে, একই সঙ্গে বাড়তি ঋণের বোঝা চাপছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটির ওপর।

বাপেক্সের বিদায়ী একাধিক এমডি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বাপেক্স নিজেরা এসব কূপ খনন করার জন্য উপযুক্ত। তারা ভোলাতে এর আগে কূপ খনন করেছে। যার মাধ্যমে এখন গ্যাস তোলা হচ্ছে। ওই কূপে ৪০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখনতো বাপেক্স আরও আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত। তাহলে বাপেক্স পারবে না এ কথা যারা বলে তাদের অন্য কোনো ধান্দা থাকতে পারে।

এর আগেও গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়া নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। গ্যাজপ্রম একাধিক চুক্তির আওতায় মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এরমধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিটি কূপের চুক্তি মূল্য ছিল ১৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এরপর সর্বশেষ যে কূপগুলো গ্যাজপ্রম খনন করেছে তার প্রতিটির চুক্তি মূল্য ছিল ১৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি)। এখন ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সেখানকার অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে ভোলায় কাজ শুরু করতে পারবে গ্যাজপ্রম।

তিনটি কূপের মধ্যে দুটি অনুসন্ধান ও একটি মূল্যায়নসহ উন্নয়ন (এপ্রেইজাল কাম ডেভেলপমেন্ট)। এই তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে ৬৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি কূপ খননে ব্যয় হচ্ছে ২১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ ডলারেরও বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় গ্যাজপ্রমকে এ কাজ দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গ্যাজপ্রমের প্রস্তাব ছিল ৬৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি। গত বছর নভেম্বরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের মেয়াদে গঠিত টেকনিক্যাল সাব কমিটি ডিসেম্বরে ‘গ্যাজপ্রমের টেকনিক্যাল প্রপোজাল এন্ড কমার্শিয়াল প্রপোজাল’ মূল্যায়ন করে পিপিসি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে। পিপিসি’র সভায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানও গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। ভোলায় কূপগুলোর প্রেসার বেশি হওয়ায় গ্যাস আহরণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে গ্যাজপ্রমের ১৭ কূপ খননের পূর্ব অভিজ্ঞাতা কাজে লাগিয়ে ভোলার ৩টি কূপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস আহরণের আশা করা যায়। পিপিসি সভায় সদস্যদের সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান তাতে সম্মতি দেন।

২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বর্তমান ৩টি কূপ খননের যে প্রস্তাব সারসংক্ষেপ আকারে পাঠায় তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, গ্যাজপ্রম ‘হ্রাসকৃত মূল্যে’ এই তিনটি কূপ খনন করবে। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু এখন ৩টি কূপের যে চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত করা হয়েছে তা গ্যাজপ্রমের আগে খনন করা কূপের দরের চেয়ে বেশি।

বাপেক্স সূত্র দাবি করেছে, ভোলা একটি আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) এটি আবিষ্কার করেছে। সেখানে একাধিক কূপও খনন করেছে বাপেক্স। গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও বাপেক্সের দেওয়া ভূতাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে, বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই (লোকেশন) গ্যাজপ্রম খনন করবে। ভোলায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্যই বাপেক্সের কাছে আছে। কূপ খননের জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলও বাপেক্সের আছে। বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে চড়া মূল্যে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ায় বাপেক্সের কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। অনেকে বাপেক্স ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এর আগেও শ্রীকাইলে কূপ খনন করার জন্য বাপেক্স ৫৫ কোটি টাকার ডিপিপি তৈরি করে। পরে সেই ডিপিপি বাতিল করে গ্যাজপ্রমকে ১৮০ কোটি টাকায় দেওয়া হয়। এর পেছনে বড় একটি চক্র কাজ করছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জ্বালানি সচিবকে ফোন দিলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর