বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি

, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 16:49:59

রংপুরে গত কয়েক দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এছাড়া গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল, কেডি ক্যানেল ছাড়াও জেলার তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, করতোয়াসহ সব কটি নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গেল ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাটসহ শহরের সড়কে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। দিনভর বৃষ্টির কারণে শহরের রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ রকম বৃষ্টিপাত আরও দুই একদিন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা সদরে এক ছাত্র ও গঙ্গাচড়ায় এক ক্ষেতমজুর মারা গেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে থানা পুলিশ তাদের নাম জানাতে পারেনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর নগরীর কোতোয়ালি থানা রোডে কথা হয় স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার আলোকচিত্রী রণজিৎ দাসের সঙ্গে। জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগের ছবি তুলতে গিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। সড়কে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে।

একই কথা জানান মুলাটোল আমতলা এলাকার বাসিন্দা শিক্ষানবিশ আইনজীবী ওসমান গনি এবং কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রওনক হাসান ও অজয় চন্দ্র। তাদের মতে, যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় চালকদের কষ্ট বেড়েছে। বিশেষ করে খানাখন্দে ভরা সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

এদিকে দিনভর বৃষ্টির কারণে শহরের রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে গেছে। নগরীর শাপলা চত্বরে রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম (৫৮) বলেন, ‘কাইল থাকি বৃষ্টি হওচে। রাস্তাত মাইনষে কম। কামাইও কম। তারপরও পেটের দায়ে বৃষ্টিত কষ্ট করি রিকশা নিয়্যা বের হচি।’

পায়রা চত্বরে কথা হয় অটোচালক কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাত্রী কম, কামাইও নাই। কোনো রকমে বৃষ্টিত ভিজি টাউনোত ভাড়া মারি বাড়ি যামো। তাছাড়া উপায়ও নাই, বাঁচা তো নাগবে।’

রংপুরে গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দিনের বৃষ্টির কারণে নগরীর মুলাটোল, কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন সড়ক, নিউ জুম্মাপাড়া আলমনগর, নিউ জুম্মাপাড়া, দর্শনা, মর্ডান মোড় সংলগ্ন এলাকা, মাহিগঞ্জ, কামারপাড়া, বাবুখাঁসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে পানিতে তলিয়ে আছে চলাচলের রাস্তাঘাট। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী ও করতোয়া বিধৌত নদী তীরবর্তী এলাকাতেও বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। জেলার গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার বেশকিছু নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। তবে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে চতুর্থ দফার বন্যার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা।

এদিকে আরও দুই একদিন ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ রকম বৃষ্টিপাত আরও দুই একদিন হতে পারে। এছাড়াও আগামী ২১ বা ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বৈরী আবহাওয়া কয়েকদিন স্থায়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর