রাজশাহীতে ৮ বছরের শিশুর নামে শ্রম আইনে মামলা!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-27 22:37:23

দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে জুবাইর আহমেদ। বয়স সবেমাত্র আট বছর। রাজশাহী পবা উপজেলার পূর্ব-পুঠিয়া পাড়া গ্রামের এই শিশুর নামেই মামলা করেছে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর!

জানা গেছে, পবা উপজেলায় পৌর মার্কেটে জুতার দোকান রয়েছে জুবাইরের বাবা জুনাব আলীর। দোকানের সাইনবোর্ডে প্রোপাইটারের স্থানে নিজের পরে শখ করে সন্তানের নামও লিখেছিলেন জুনাব আলী।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দোকান খোলা রাখার কারণ দেখিয়ে শ্রম আইন-২০০৬ লঙ্ঘনের দায়ে জুনাব আলী ও তার ৮ বছরের শিশুসন্তান জুবাইর আহমেদের নামে মামলা করে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফর।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জুনাব আলীর বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ওই পরিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, মামলার ৫ মাস পর গত ২৫ মার্চ প্রথম দফা আদালতে হাজিরা দেন জুনাব আলী ও তার শিশুসন্তান জুবাইর আহমেদ। সবশেষ রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) হাজিরা দেন বাবা ও সন্তান। আগামী ৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন বিচারক।

এদিকে, ৮ বছরের স্কুলপড়ুয়া শিশুকে বারবার আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করার বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন- ৮ বছরের শিশুকে মামলার আসামি করা কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছুই না। তারা নিজেদের তৎপরতা দেখাতে মাঝেমধ্যেই কিছু ব্যবসায়ীর নামে মামলা দিয়ে চলে যায়।

জুবাইরের বাবা জুনাব আলী বলেন, ‘শখ করে সন্তানের নাম সাইনবোর্ডে লিখে আমি এখন চরম বিপাকে পড়েছি। শুক্রবার দুই ঘণ্টা দোকান খুলে কী মহা দোষ করেছি আমি? এখন অবুঝ ছেলেকে নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় যেতে হচ্ছে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?’

আদালতে হাজিরা দেয়া নিয়ে শিশু জুবাইর আহম্মেদও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিশুটি জানায়, কোর্টে যেতে ভয় করে। যেদিন তারিখ থাকে, সবাই বলে আমাকে এবার পুলিশ আটকে রাখবে। তাই খুব ভয় করে।

অপরদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের লোকজন বছরে দু’চারবার হুটহাট অভিযান চালিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করে। হেনস্তার শিকার অধিকাংশরা অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সংসারে খুব অভাব তাদের। শ্রম আইনের ফাঁক-ফোকরে ঢুকিয়ে মামলা দিয়ে তাদেরকে হেনস্তা করা হয়।

মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেয়া আরেক দোকানি নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার নামে যেদিন মামলা দিয়েছে, সেদিন আমি দোকান খুলিনি। দোকান বন্ধ থাকার পরও দেখি মামলার নোটিশ এসেছে।’

তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বিনা কারণে কারও নামে মামলা দেয়া হয় না। আইন লঙ্ঘন করলেই কেবল মামলা হয়।’ তবে শিশু জুবাইরের বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ভুলের কথা স্বীকার করেন তিনি।

জুনাব আলী ও তার ছেলে জুবাইর আহম্মেদের পক্ষের আইনজীবী এস আলম জামান রাসেল জানান, শ্রম আইনে আট বছরের এই শিশুটি মামলার আসামি হতে পারে না। এটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর