পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ভোগান্তি বাড়ছে তিন কারণে

, জাতীয়

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-08-27 07:32:27

রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার যানবাহন পারাপার হয় এই নৌরুটের প্রতিটি ঘাট দিয়ে।

ফেরিতে করে উত্তাল পদ্মা পারাপারে সময় লাগে আধ ঘণ্টা বা তার চেয়ে একটু বেশি। তবে এই আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের জন্য যানবাহন চালকদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি, বাস এবং জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে ভোগান্তি কিছুটা কম হলেও দীর্ঘ ভোগান্তির কবলে পড়ে ট্রাক চালকরা।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত বা অন্য কোনো বিপর্যয় হলেই বেড়ে যায় ট্রাক চালকদের ভোগান্তি। অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন। গেলো প্রায় মাস খানেক সময় ধরে এমন ভোগান্তির কবলে ট্রাক চালকরা। আর তিনটি কারণে এমন ভোগান্তি হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে দ্রুত সময়ে সমস্যা সমাধানের দাবি যানবাহন চালকদের।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট।
 

১. ফেরি সংকট
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে ছোট বড় মোট ১৯টি ফেরি রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৬টি ফেরি বিকল হয়ে মেরামত কারখানায় রয়েছে। যার মধ্যে ৩টি পাঠানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে। আর বাকি ৩টি মেরামতে রয়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ভাসমান মেরামত কারখানা মধুমতিতে।

১৯টি ফেরির মধ্যে ৬টি ফেরি বিকল থাকায় ভোগান্তি বাড়লেও অল্প সময়ে ফেরিগুলো মেরামত করা সম্ভব নয় বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ফেরিগুলো বেশ পুরাতন হওয়ায় লক্কর ঝক্কর হয়ে যাওয়ার ফলে নষ্ট হয় বেশি। নষ্ট ফেরিগুলো নাম মাত্র মেরামত করে আবার নৌরুটে নামানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

২. নাব্যতা সংকট
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে ১৩ জুলাই থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে একই ঘাট এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং কার্যক্রম চলতে থাকলেও প্রায়ই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে ফেরি।

নাব্যতা স্বাভাবিক রাখতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান ড্রেজিং কার্যক্রম তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্কাস আলী। তবে নাব্যতা কার্যক্রমের বিষয়ে সার্বিক কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

৩. যানবাহনের বাড়তি চাপ
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের আরিচা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলে ১৩ থেকে ১৪টি। যার মাধ্যমে প্রতি ঘাট দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার যানবাহন পারাপার করা সম্ভব।

এর চেয়ে বাড়তি চাপ হলেই শুরু হয় ভোগান্তি। এছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে সীমিতভাবে ফেরি চলাচল করার কারণে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভোগান্তি বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ভাসমান মেরামত কারখানা মধুমতি।

যানবাহন চালকদের বক্তব্য

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে চলাচলরত একাধিক ট্রাক চালক বলেন, ঘাট এলাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত বা অন্য কোনো বিপর্যয় হলেই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন তারা। আগে শুধু ফেরিঘাটের টার্মিনালে ভোগান্তি হলেও এখন টার্মিনালের ৬ কিলোমিটার আগের এলাকা উথুলী থেকে ভোগান্তি শুরু হয়। ট্রাক পারাপার নিয়ে শিবালয় থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের বাণিজ্য চলে রাতভর।

নির্ধারিত টিকিটের চেয়ে এক হাজার টাকা অতিরিক্ত দিলেই নৌরুট পারাপারের টিকিট মিলে খুব সহজে। আর সিরিয়াল বাদ দিয়ে ঘাটে আসতে উথুলী এলাকার দায়িত্বরত পুলিশকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। স্থানীয় কিছু দালাল চক্রের মাধ্যমে এই টাকা নেয়া হয় বলে জানান ট্রাক চালকরা। যে কারণে ঘাট এলাকার পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্থায়ীভাবে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান কেউ কেউ।

উথুলী এলাকার সংযোগ মোড়ে অবৈধভাবে পুলিশের টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির জানান, বাড়তি টাকা নিয়ে উথুলী থেকে ঘাটমুখী সিরিয়ালবিহীন ট্রাক ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সংকট প্রকট। এছাড়া নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে আবার বাড়তি যানবাহনের চাপ রয়েছে। যে কারণে ভোগান্তিও বাড়ছে। আর বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর