ছাত্রদল থেকে খোলস পাল্টে যুবলীগে কে এই 'আমির'

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-29 22:19:04

কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার। এভাবেই ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই কবির হোসেন সরকারকে আহবায়ক ও মইনুল ইসলাম ভুইয়াকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১৯ সদস্যের আশুলিয়া থানা কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

কিন্তু আহবায়ক কমিটির ৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইউনিয়ন পর্যায়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটির রূপ দিতে শুরু করেছেন। এই কমিটিতে স্থান পেতে মরিয়া ছাত্র দলের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে একাধিক মামলার আসামিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া যুবলীগকে পূর্নাঙ্গ কমিটির রূপ দিতে ইতিমধ্যেই আশুলিয়া, পাথালিয়া ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কমিটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে স্থান পেয়েছে নিকটাত্মীয়সহ একাধিক মামলার আসামি।

এবার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পালা। যার গুরুত্বপূর্ণ পদে গুঞ্জন শোনা যায় বিতর্কিত নেতা কর্মীর নাম। এক সময়ের বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ ঝুলছে যার কাঁধে, সেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ছাত্রদল নেতা নামের সাইনবোর্ড ঝুলছে তার পিঠে এমন অভিযোগ অনেক ত্যাগী নেতার। তিনি হলেন গত তিন বছর ধরে ইউনিয়নের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্বে থাকা আমির হোসেন জয়। তার বড় ভাই মোঃ আমানুল্লাহ এখনও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীর অর্থ যোগানদাতা হিসাবে এলাকায় বেশ পরিচিত। মূলত আমানুল্লাহর হাত ধরেই জয় ছাত্র দলের রাজনীতিতে আসেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমির হোসেন জয় বিএনপি জামায়েত জোট সরকারের সময় প্রায় ৪ বছর শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্বরত ছিলেন বলে জানা গেছে। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই চার বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের ঈদ পূণর্মিলনী, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বিভিন্ন নেতা নেত্রীদের সাথে সখ্যতা ও তাদের সাথে ওঠা ছবি দেখে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না যুবলীগের অনেক ত্যাগী নেতারা। অভিযোগ রয়েছে আমিরের ছত্রছায়ায় তারই কমিটির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এমএল হোসেন ও যুবদল কর্মী এবং হত্যা মামলার আসামি সাব্বির আহমেদ খোলস পাল্টে যুবলীগ পরিচয়ে ইউনিয়ন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

২০১৪ সালের পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণ মিছিলে সাব্বির

এ ব্যাপারে আমির হোসেন জয়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও মিটিংয়ে থাকার অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আমির হোসেন জয় সত্যিই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে গত তিন বছর ধরে ছাত্রদলের খোলস পরিবর্তন করে যুবলীগের খোলসে আবৃত হয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সাথেই। শক্তি সামর্থ্যও বেড়ে যায় কয়েক গুন। আর এ কারণেই হেলমেট দিয়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরকম বিতর্কিত, হাইব্রিড ও সুবিধাভোগী এক জনকে আশুলিয়া যুবলীগে সম্পৃক্ত করা হলে থানা যুবলীগও বিতর্কিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এব্যাপারে তৎকালীন শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, আমির হোসেন জয়ের ভাই আমানউল্লাহ আমাদের কমিটির ৩৯ নম্বর সদস্য। সে আমাদের কর্মসূচীর জন্য সবসময় অর্থ সহযোগিতা করতো। আর আমানউল্লাহর ভাই আমির আমাদের সব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতো।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চলমান বিএনপির কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, আমিরকে আমরা আমির হোসেন নামেই চিনি। ওর নাম তো জয় না। দলের সাথে সাথে নামটাও পরিবর্তন করেছে। আমিরের ভাই ও আমির আগে থেকেই বিএনপির রাজনীতি করতো। এখন শুনি আমির নাকি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে।

২০০৭ সালের ছাত্রদলের ৭ নং ওয়ার্ড কমিটিতে আমির হোসেন জয় সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন শিমুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক ওসমান গণি।

আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ময়নুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, সে যে বিএনপির নেতা ছিল তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

থানার আহবায়ক কবির হোসেন সরকার বলেন, জয় কখনও বিএনপির নেতা ছিল না। সে ছাত্রলীগ করতো। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যেসব ছবি বিএনপি নেতাদের সাথে আছে সেগুলো তো কোন বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানেরও হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর