দু’দফার বন্যায় প্লাবিত হয় মানিকগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা। পদ্মা-যমুনার পানিতে তলিয়ে যায় জেলার কয়েক হাজার মৎস্য খামারিদের পুকুরসহ বিভিন্ন খাল-বিল। বন্যার পানি নেমে গেলেও দেশীয় মাছের সংকট রয়েছে মানিকগঞ্জের তরা পাইকারি মৎস্য আড়তে।
মানিকগঞ্জ জেলা ছাড়াও ঢাকা, সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া এবং টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় হাজার খানেক মাছ ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে তরা মাছের আড়তে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর পাশেই মাছের এই আড়তটি ভোর ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাক ডাকে সরগরম থাকে।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন মাছ বিক্রিতে আড়তদারদের হাঁকডাকে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায় সরেজমিনে। দরদাম যাচাই বাছাই করে জমজমাট বিকিকিনি চলছে মাছের আড়তটিতে। তবে বড় মাছের চেয়ে দেশীয় মাছের চাহিদা বেশি থাকলেও আমদানি কম বলে জানান ক্রেতারা।
তরুন হালদার নামের এক ক্রেতা বলেন, নয়ারহাট বাজারে খুচরা বিক্রির জন্য নদী-নালা ও খাল-বিলের দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রয়ের জন্যে এসেছেন তিনি। খুচরা বাজারে বড় মাছের চেয়ে দেশীয় মাছের চাহিদা বেশি। তবে চাহিদা থাকলেও দেশী প্রজাতির মাছের আমদানি খুব কম। আবার অল্প কিছু মাছের আমদানি থাকলেও তার অতিরিক্ত দাম বলে জানান তিনি।
আরিফ হোসেন নামের এক আড়তদার বলেন, সারা বছর দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাইকারি বাজারদরে বিক্রি করেন তিনি। গেলো মাসেও দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছে বাজার ভরপুর ছিলো। তবে কিছুদিন ধরে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের আমদানি নেই বললেই চলে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা মাঝিপাড়া এলাকার জেলে নারায়ন হালদার বলেন, ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদী এখনো পানিতে টইটুম্বুর। যে কারণে নদী মাছ শিকার করা যাচ্ছে না। আর স্থানীয় খাল-বিল এবং নদী-নালায় মাছ শিকারে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
যারা জমির মালিক বা যাদের বাড়ির সাথে ওই খাল-বিলগুলো তারাই বাণিজ্যিকভাবে মাছগুলো শিকার করেন। আবার অনেকে ছাটা ফেলে বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে খাল-বিলের জমি আটকে রেখে নিয়মিতভাবে মাছের খাবার দেন। যে কারণে দেশীয় মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক জেলে। যার প্রভাব পাইকারি মাছের বাজারে পড়েছে বলে জানা তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম নামে এক আড়তদার বলেন, বরিশালের বড় বড় ইলিশের পসড়া সাজিয়ে ভোর থেকে আড়তে বসে রয়েছেন তিনি। প্রতি কেজির পাইকারি বাজারদর ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। তবে ইলিশের ক্রেতা কম। খুচরা বাজারে চাহিদা কম থাকায় পাইকারি বাজারে চাহিদা নেই বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা পাইকারি মৎস্য আড়তের সভাপতি ভোলানাথ হালদার বলেন, জেলের জালে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার কমে যাওয়ায় আমদানি কম। এই সুযোগে স্থানীয় জেলেরা দেশীয় মাছের ভালো বাজারদর পেলেও পাইকারি ক্রেতারা রয়েছে হতাশায়। তবে বড় মাছের বাজারদর ও আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।