টেন্ডার ছাড়াই রাজশাহীর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ২০০ গাছ সাবাড়!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-28 17:12:26

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় প্রায় ২০০ গাছ কাটছে কর্তৃপক্ষ। অথচ এর জন্য কোন টেন্ডার দেয়া হয়নি। টেন্ডার ছাড়াই গাছগুলো কাটছেন রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার রবিন নামের এক ব্যবসায়ী। গত তিনদিন ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। অভিযোগ উঠেছে- চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসিকের কর্মকর্তারা ৮ লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেছেন। টেন্ডার ছাড়াই পানির দরে বিক্রি করা এসব গাছের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পরপরই রাজশাহী শহরবাসীর বিনোদনের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান এখানে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্যানে মূল্যবান গাছের চারা রোপণ, ফুল গাছের কোয়ারি ও কুঞ্জ তৈরি, লেক ও পুকুর খনন, কৃত্রিম পাহাড় তৈরি অর্থাৎ সামগ্রিক কাজ শুরু হয় ১৯৭৪-৭৫ ও ১৯৭৫-৭৬ সালে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান ও নজরুল ইসলামের সময়ে কিছু দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষরোপণ করা হয় এখানে। সাম্প্রতিককালে সেসব গাছের বেশকিছু কাটা পড়েছে নভোথিয়েটার নির্মাণের জায়গা করে দিতে। এখন আবার বোটানিক্যাল গার্ডেনের উন্নয়নমূলক কাজের নামে প্রায় ২০০ গাছ কাটা হচ্ছে টেন্ডার ছাড়াই।

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই চোখে পড়ে গাছ কাটার মহোৎসব। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় কাটা ডালপালা, গাছের গুঁড়ি। চিড়িয়াখানার ভেতরে কৃত্রিম পাহাড়ের কাছে যেতেই চোখে পড়ে প্রায় ২৫/৩০ জন শ্রমিক ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে বিশাল আকৃতির সব গাছ কাটছেন। শ্রমিকেরা অনেকটা তড়িঘড়ি করে গাছের গুড়ি দ্রুত ট্রলিতে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে- চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসিকের কর্মকর্তারা ৮ লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেছেন

সেসময় কতগুলো গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার হিসাব রাখার দায়িত্বে ছিলেন মো. ইদুল নামের এক যুবক। তিনি জানান, রবিন নামের এক ব্যক্তি গাছগুলো কাটার কাজ পেয়েছেন। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে তারা গাছ কাটছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরে তাদের ২০০ গাছ কাটতে বলা হয়েছে। এ জন্য লাল চিহ্নও দেওয়া হয়েছে গাছে।

তবে গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। তিনি বলেন, ‘পার্কের ভেতর কিছু ঢোকাতে কিংবা বের করতে হলে আমাকে জানাতে হবে। কিন্তু গাছ কাটার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি কিছু জানি না।’

গাছ কাটার বিষয়ে ব্যবসায়ী রবিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কত টাকায় তিনি গাছ কিনেছেন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোন কথাও বলতে রাজি হননি। তিনি রাসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

চিড়িয়াখানার উদ্ভিদতত্ববিদ হেলেন খাতুন বলেছেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সব বিরল প্রজাতির গাছ থাকতে হয়। এত সাধারণ গাছ থাকার তো দরকার নেই। সেজন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। তবে টেন্ডার হয়েছে কি না তা রাসিকের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও রাসিক মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী আলমগীর কবির বলেন, ‘গাছের ডালপালা কাটার জন্য বলা হয়েছে। গাছ তো কাটতে দেওয়া হয়নি।’ আলমগীর কবির স্বীকার করেন, ‘এর জন্য কোন টেন্ডারও দেওয়া হয়নি।’

তারপরও গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানাবেন।’ কিন্তু পরে তার আর কোন সাড়া মেলেনি। বরং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর