করোনার ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কুমিল্লার পর্যটন শিল্প

, জাতীয়

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-30 23:47:11

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশের মতো কুমিল্লাতেও পর্যটন খাত থমকে গিয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস বন্ধ ছিল জেলার সকল পর্যটন স্পটগুলো। কুমিল্লার ‘পর্যটন নগরী’ খ্যাত কোটবাড়ি এলাকায় গত ৬ মাস ছিল শুনশান নীরবতা। দীর্ঘ সময় ধরে কুমিল্লার পর্যটন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় শূন্য। পাশাপাশি চরম ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কগুলোর মালিকরাও।

তবে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পরে প্রাণ ফিরেছে কুমিল্লার পর্যটন শিল্পে। করোনার ক্ষত কাটিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কগুলোর সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর নানা বয়সী পর্যটকের কোলাহলে কুমিল্লার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকায় প্রাণ ফিরেছে। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পার্কগুলোতেও ঘুরতে আসছেন দর্শনার্থীরা। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে প্রাণচাঞ্চল্যময় হয়ে উঠছে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার ঐতিহ্যবাহী লালমাই পাহাড় ঘিরে গড়ে ওঠা সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কগুলো। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীরাও।

এদিকে, করোনার মধ্যেই প্রতি বছরের মতো আজ ২৭ সেপ্টেম্বর রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছেন ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয় ও অন্যান্য সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গত ১৭ মার্চ থেকে কুমিল্লা জেলার সকল পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে শুরু করে কুমিল্লার পর্যটন স্পষ্টগুলো। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে বন্ধ ছিল কুমিল্লার সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। অবশেষে দীর্ঘ ৬ মাস পর অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হয় জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই দলে দলে দর্শনার্থীরা জেলার ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখছেন। শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়াসহ জেলার সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো এখন প্রাণচাঞ্চল্যময় হয়ে উঠেছে। প্রাণ ফিরেছে জেলার ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কগুলোতেও।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় অন্তত ২৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উন্মোচিত হওয়া ১২টির মধ্যে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে সরকার রাজস্ব আয় করছেন। অন্যগুলো এখনো বিনা খরচে দেখতে পারছেন পর্যটকরা। শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮১৫ টাকা। আর করোনা মহামারির আগে চলতি বছরের আড়াই মাসে (১৬ মার্চ পর্যন্ত) সরকারের রাজস্ব আয় হয় ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪০ টাকা। এরপর থেকে দীর্ঘ ৬ মাসে এখান থেকে কোনো রাজস্ব আয় হয়নি সরকারের।

শালবন বিহারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, আবুল বাশারসহ বেশ কয়েকজন জানান, করোনার কারণে সব কিছু থমকে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে প্রাণচাঞ্চল্যময় হয়ে উঠছে জেলার সকল পর্যটন স্থানগুলো।

কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার সালমানপুরে অবস্থিত ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক, কুমিল্লা নগরীর ঢুলিপাড়া এলাকার ফান টাউন পার্কসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কগুলোর উদ্যোক্তারা জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পার্কগুলোর মালিকদের প্রায় সকলেরই ব্যাংকঋণ রয়েছে। করোনার কারণে সব তছনছ হয়ে গিয়েছিল। তবে নতুন করে এখন সব কিছু আবারো চালু হয়েছে। এখন সকলেই আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ময়নামতি জাদুঘর এলাকার খুদে ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ৬ মাস আগেও শালবন বিহারের সামনে আমার খাবারের হোটেল ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সব হারিয়েছি। তবে হাল ছাড়িনি, এখন ফুচকা ও চটপটির ব্যবসা শুরু করেছি। আশা করছি সব কিছু ঠিক থাকলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

কুমিল্লা ভিক্টোরি ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ পাটোয়ারি বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লার পর্যটন অনেক আগে থেকেই সম্মৃদ্ধ। কুমিল্লার পর্যটন স্পটগুলো থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। সকলকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে কুমিল্লার সরকারি-বেসরকারি পর্যটন খাতগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (কুমিল্লা কার্যালয়) ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা সাময়িকভাবে থেমে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারো সবকিছু চালু হয়েছে। শুরুর দিন থেকেই দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পর্যটকদের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস এর মাধ্যমেই কুমিল্লার সরকারি-বেসরকারি পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলেই ঘুরে দাঁড়াবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর