নিরাপত্তাহীনতায় আশুলিয়ার সাংবাদিকরা

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-26 01:37:50

ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়া থানা। শিল্প-কারখানায় সমৃদ্ধ এই দুই থানা। আশুলিয়ায় থানায় অবস্থিত দেশের আয়ের প্রধান উৎস ঢাকা ইপিজেড। দেশের অর্থনীতি খাতের পাশাপাশি ইতিমধ্যে নানান অপরাধমূলক ঘটনার হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে এই এলাকা। বিগত দিনে দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা এখানকারই। যেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৯ জনকে।

এখানেই শেষ নয়, আশুলিয়ার মহাসড়কে দিন-দুপুরে ছুরিকাঘাত করে পুলিশ সদস্যকে হত্যা করার নজিরও রয়েছে। এমন একটি জোনে নিরাপত্তাহীনতা থাকা স্বত্বেও ঝুঁকি নিয়ে দেশের অর্থনীতি বিশ্ব দুয়ারে তুলে ধরছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তবে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই ঝুঁকির বাস্তবতা ফুটে উঠেছে আশুলিয়া প্রেসক্লাবে ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে।

ঘটনার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ প্রশাসন সুশীল সমাজ ও গোয়েন্দার লোকজন। সমবেদনাও জানাচ্ছেন অনেকেই। তবে এতে কতটুকু সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে সেই প্রশ্ন রয়েই গেলো।

রোববার ঠিক ৮টা বেজে ১০ মিনিট। সারাদিন সংবাদ সংগ্রহ শেষে সময় কাটাচ্ছেন সাংবাদিকরা। কেউ কেরাম খেলছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, কারো হাতে চায়ের কাপ। আবার কেউবা শহীদ মিনার চত্বরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ঠিক এ সময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল সংলগ্ন প্রেসক্লাব চত্বরে পর পর দুই বার বিকট আওয়াজ। নিমিষেই সাদা ধোয়ায় আচ্ছাদিত হয় পুরো প্রেসক্লাব চত্বর।

ঘাম ঝরানো ইতিহাসের সাক্ষী হলো আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা। এ সময় কোনোমতে জীবন রক্ষা পেয়েছেন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সময় টেলিভিশনের ঢাকা জেলা সাব ব্যুরো প্রতিনিধি মোজাফফর হোসাইন জয়, এটিএন নিউজের ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি জাহিদ হাসান সাকিল, যমুনা টিভির ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান নিপু, দেশ টিভির ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি শাহিনুর রহমান শাহিন, মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি লাইজু আহমেদ।

প্রেসক্লাব চত্বরে ছিল সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রাইভেট কার। তার আড়ালেই দাড়িয়ে ছিলেন তারা। ককটেলের স্প্লিনটার এসে গাড়িতে লাগায় তারা বেঁচে যান।

ঘটনাস্থলে পুলিশ

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোজাফফর হোসাইন জয় বলেন, আমরা ৫ জন শহীদ মিনারের পিছন দিক থেকে হাঁটতে হাঁটতে প্রেসক্লাবের হলরুমে যাচ্ছিলাম। এস ময় সামনে একটা আওয়াজ হয়। ঘটনা বুঝতে সামনে এগিয়ে যাই আমরা। সেখানে দেখতে পাই পুরোনো সংবাদের কাগজে কালো টেপ দিয়ে পেঁচানো ককটেল সাদৃশ্য বস্তু। এ সময় গাড়ির আড়াল থেকে বিকট আওয়াজ হয়। নিমিষেই ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয় পুরো ক্লাব প্রাঙ্গণ। বাঁচতে দৌড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এটিএন নিউজের ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি জাহিদ হাসান সাকিল জানান, আমরা প্রাণে বেঁচে গেছি। প্রেসক্লাবের সিসিটিভির ক্যামেরা গুলো আকাশের দিকে ছিল। যাতে আমরা আঁচ করতে না পারি যে ঘটনাটি পরিকল্পিত।

আশুলিয়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি লাইজু আহমেদ জানান, এই মুহূর্তে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ঘটনাটির সাথে যারাই জড়িত রয়েছে প্রশাসন যেন ক্ষতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, প্রেসক্লাবে দুটি ককটেল সাদৃশ্য বস্তু বিস্ফোরণ হয়েছে। পরপর দুটি বিকট শব্দ হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না।

শ্রমিক লীগ, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন মোহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, প্রেসক্লাবে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সাথে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক মোজাফফর হোসেন জয়কে হুমকি প্রদান করে মানিক নামের এক ব্যক্তি। পরে এদিন আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সময় টেলিভিশনের ঢাকা জেলা সাব-ব্যুরো প্রতিনিধি মোজাফফর হোসাইন জয়। হুমকির ৪ দিনের মাথায় দুঃসহ ঘটনার সাক্ষী হলেন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর