৩ ফসলি জমিতে সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা

, জাতীয়

মাহমুদ আল হাসান (রাফিন), ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী | 2023-08-30 10:51:06

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ রোপা আমন ধান। আমন ধান ছাড়াও এসব উর্বর জমিতে উৎপাদিত হয় ইরি, বোরো, ভুট্টা, আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন অর্থকরি ফসল। যা দিয়ে চলে দেড় শতাধিক পরিবারের ভাত, কাপড়, শিক্ষা ও চিকিৎসা। ৩ ফসলি এসব জমিতে একটি বিদেশি কোম্পানির সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জমি কেনার হিড়িক পড়ায় দেড়শ পরিবারের মাথায় বাজ পড়েছে।

বাইশপুকুর মৌজার ১ হাজার ১৯ হেক্টর জমির মধ্যে ১৮৩ দশমিক ৮২ একর জমিতে একটি সোলার প্যানেল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে নরওয়ে ভিত্তিক সোলার প্যানেল কোম্পানি ‘স্কেটেক সোলার’।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় ওই এলাকার কিছু দালাল এই ৩ ফসলি উর্বর জমি স্কেটেক সোলার কোম্পানির পক্ষে ক্রয়ে সাহায্য করতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে। তারা জমির মালিকদের নানা প্রলোভনে ফেলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। এ অভিনব প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ একর জমি তারা ক্রয় করে। এসব জমির উপর ৬৫ পরিবার যুগ যুগ ধরে বসতভিটা নির্মাণ করে বসবাস করছে। ওই এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইন বিদ্যমান রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অধিশাখার আহ্বায়কের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, প্রকল্পভুক্ত ১৮৩ দশমিক ৮২ একর জমি সম্পূর্ণ কাশবন ও বালুচর হিসেবে পতিত রয়েছে। যা মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ তা ৩ ফসলি জমি। নেই মাঠের কোনো অস্তিত্ব।

মনোহারা বিল রক্ষা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজী নুরুল আমীন চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। দাখিলকৃত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বাইশপুকুর মৌজায় ১ হাজার ১৯ হেক্টর জমি উর্বর। এসব জমিতে অর্থকরি ফসল আমন, ইরি-বোরো, ভুট্টা, পাট, গম, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি আবাদ হয়ে থাকে। যা এসব পরিবারের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিমলা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে জমির বাস্তব চিত্রের কোনো মিল নেই। তিনি প্রভাবিত হয়ে একটি মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করে এসব ৩ ফসলি জমিকে কাশবন ও বালুচরে রূপান্তর করেছেন।

স্থানীয় সমাজকর্মী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এসব জমির উপর বসতভিটা রয়েছে। জমি চাষাবাদ করে আমাদের জীবন জীবিকা চলছে। কিন্তু জোর করে আমাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করতে চাচ্ছে। এসব জমির উপর সোলার প্যানেল করা হলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ব। বেঁচে থাকার মতো কোনো অবলম্বন থাকবে না। দিন কাটবে অনাহারে-অর্ধহারে। বেঁচে থাকার জন্য হয়তো বেছে নিতে হবে ভিক্ষা বৃত্তির মতো পেশা।’

নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ডিমলা উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর