সাগরে বেড়েছে জলদস্যুতা, বেকায়দায় জেলে

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 04:03:00

কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে জলদস্যুদের বিচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ জলদস্যুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে ফিশিং ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা। জলদস্যুদের ভয়ে মালিকরা মাছ ধরার জন্য ট্রলার সাগরে পাঠাচ্ছে না। এতে বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো জেলে।

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। এসব ট্রলারে থাকা মাঝি-মাল্লাদের বেধড়ক মারধর ও গুলি করে জলদস্যুরা। এছাড়াও ট্রলারে থাকা মালামাল, আহরণকৃত মাছ, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে যায়। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছে কক্সবাজার উপকূলের হাজারো জেলে।

সমিতি সূত্রে আরও জানা যায়, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেই গড়ে উঠেছে জলদস্যুদের একটি সিন্ডিকেট। যারা প্রতিনিয়ত জলদস্যুদের সহযোগিতা করে। জলদস্যুরা যে মালামাল নিয়ে আসে তা বিক্রি করে এ চক্রটি। তাই এই চক্রকে আইনের আওতায় আনলে সাগরে জলদস্যুতা অনেকাংশে কমে যেত।

গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরের লাশের খাড়ি নামক স্থানে কুতুবদিয়া উপকূলের ৫টি ফিশিং ট্রলারসহ ১৫টি ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে জলদস্যুদের গুলিতে মাঝি শফিউল্লাহ (৪০), মো. আলী (৩০), কামাল (২৮), মো. আনিচ (৩২) নামে ৪ জেলে গুলিবিদ্ধ হয়। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত সোমবার বঙ্গোপসাগরের ১৮ মইল এলাকায় ১৪ জেলেকে কুপিয়ে আহত করে জলদস্যুরা। আহত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর ১৪ জেলে মহেশখালী উপকূলে ফিরে আসে। এরপর তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও গত এক মাসে এ ধরনের প্রায় অর্ধশতাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি।

জলদস্যুদের কবলে পড়া ট্রলার এফবি সাদিয়ার মালিক কামাল উদ্দিন আহত জেলেদের বরাত দিয়ে বার্তা২৪.কমকে জানান, গত বুধবার সকালে কুতুবদিয়া উপকূলের আকবর বলী ঘাট হতে গভীর সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশে যায়। বৃহস্পতিবার কুতুবদিয়া উপকূল হতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অদূরে বঙ্গোপসাগরের লাশের খাড়ি নামক স্থানে মাছ ধরারত অবস্থায় অন্য ট্রলার যোগে ১৪/১৫ জন অস্ত্রধারী জলদস্যুর দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে জলদস্যুরা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় তার ট্রলারের চার জেলে গুলিবিদ্ধ হয়।

মহেশখালীর জহির মাঝি বলেন,‘মালিকের লোকসান হলেও আমাদের করার কিছু নেই। সমুদ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা সাগরে যেতে চাই না। যদিও মাছ ধরতে না পেরে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি না হাওয়া পর্যন্ত আমাদের কোনো সদস্য সাগরে যাবে না। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। জলদস্যুরা হত্যা করলেও এর কোনো প্রতিকার নেই।’

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বার্তা২৪.কমকে জানান, ভয়ে মাঝি-মাল্লারা সাগরে যেতে চায় না। কিন্তু প্রতিটি শ্রমিকই বিপুল টাকা অগ্রিম নিয়েছে। তারা না যাওয়ায় মালিক পক্ষ চরম লোকসানে পড়েছে। তবে জীবনের মূল্য সবার আগে। তাই মাছ ধরার জন্য ট্রলার সাগরে পাঠানো হচ্ছে না।’

কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইসচার্জ (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস বার্তা২৪.কমকে জানান, কুতুবদিয়া থানার তালিকাভুক্ত অধিকাংশ জলদস্যুকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। যারা কক্সবাজার উপকূলে জলদস্যুতা করছে তারা বাঁশখালী, বরগুনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বার্তা২৪.কমকে জানান, কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিছু কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। যারা কূলে থেকে জলদস্যুদের সহযোগিতা করছে তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। তবে দায়িত্বটা বেশি কোস্টগার্ডের।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্বজোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার মো. সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে জানান, সাগরের যে সকল স্থানে জলদস্যুতা চলে সেখানে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জলদস্যুদের ধরতে জেলেরা কোনো ধরনের সহযোগিতা না করায় তা দমনে একটু সময় লাগছে।

তিনি আরও জানান, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, মাতারবাড়ি, টেকনাফসহ সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন স্টেশনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় জলদস্যুতা দমনের অভিযান থমকে যায়। যার ফলে জলদস্যুরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর