ট্রাফিক আইন: সচেতন হচ্ছে নগরবাসী

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 03:04:36

রাজধানীতে গণপরিবহণ চালক, পথচারী বা ব্যক্তি মালিকানার গাড়িগুলো ট্রাফিক আইন মানতে শুরু করেছে। যেখানে আগে কেউই নিয়ম-কানুনের ধারের কাছে যেতেন না। তারাই এখন সাবধানতা অবলম্বন করে রাজধানীর পথে চলাচল করছে।

রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামটোর, ফার্মগেট, পান্থপথ, সাইন্সল্যাব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পথচারীরা আর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন না। ঠিক জেব্রা ক্রসিং দিয়েই চলাচল করছেন তারা। গণপরিবহণ বা ব্যক্তি মালিকানার গাড়িগুলো জেব্রা ক্রসিং থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে, সবুজ সিগনালের জন্য অপেক্ষা করছেন।  

সেপ্টেম্বর মাসকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে ট্রাফিক সচেতনতা মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায়, পথচারীদের রাস্তা পারাপার হতে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে এক প্রকার বাধ্য করা হচ্ছে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও চালকদেরকে। কঠোর আইন প্রয়োগ না করেও, জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস এবং ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে অনুরোধ করছেন ট্রাফিক পুলিশসহ সড়কের শৃঙ্খলা ফেরার কাজে নিয়োজিত বিএনসিসি'র সদস্যরা।

তাছাড়া মোটরসাইকেল চালকসহ আরোহীরাও নিয়মিত হেলমেট পড়ছেন। সব কিছু মিলে সাধারণ মানুষের মাঝে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ছে বলে মনে করছেন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে পথচারী মাহবুব রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মনে হচ্ছে মানুষ ট্রাফিক আইন মানতে শুরু করেছে। এই কিছুদিন আগেই তো দেখতাম, সিগনাল ফেললেও পাশ কাটিয়ে কত বাস ঢুকে যাচ্ছে সড়কে। আর মোটরসাইকেল চালকদের কথা তো বলাই যাবে না, ফুটপাত তো পুরোটায় তাদের দখলে ছিল। ভয়ে হোক আর ইচ্ছে করে হোক, আপনাকে মানতেই হবে মানুষ একটু হলেও সচেতন হয়েছে। 

মোহাম্মাদপুর থেকে মতিঝিল রুটের রাজা সিটি পরিবহনের  চালক জয়নাল আবেদিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের দোষ থাকেনা, একথা ঠিক না। তবে মানুষও খুব খারাপ। হর্ন দিতে থাকলেও মানুষ রাস্তার মাঝে দিয়ে চলতে থাকে। তারা রাস্তার মাঝে হাত তুলেই মনে করে তাদের দায়িত্ব শেষ, আমি চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কি পারবো না সেটা ভাবে না। গাড়ির ব্রেক কাজ নাও তো করতে পারে, সেটা মানুষ ভাবে না। তাই আমাদের চালকের দোষ না দিয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চন বার্তা২৪.কমকে  বলেন, ট্রাফিক আইন আমরা কেউই মেনে চলি না, সেটা চালক বা পথচারী। দেখা গেছে ৯০ শতাংশ মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। আমরা অনেকেই বড় বড় কথা বলি, কিন্ত দিন শেষে দেখা যায়, তারাই অসচেতন ভাবে রাস্তায় চলি। আমাদের নিজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, আমরা সচেতন হব মানুষকে সচেতন হতে সাহায্য করবো। আমি মনে করি না, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা খুব কঠিন কিছু।  আমরা একটু আন্তরিক হলেই সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আনতে পারবো।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সড়কে প্রাণহানি ঠেকাতে পথচারী পারাপারে জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া দরকার। তবে প্রাথমিকভাবে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে বাসে ওঠা নামা বন্ধ করতে হবে। তাহলে নগরীতে অনতত শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে।

সার্বিক বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইন প্রয়োগ করে ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তন বা মানুষকে সচেতন করা কঠিন। আমরা ট্রাফিক পুলিশদের কখনো সহযোগিতা করতে চাইনা। আমরা যদি শুধু ট্রাফিক পুলিশদের একটু সহযোগিতা করি, তাহলে সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

অন্যদিকে দিকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, গত কয়েকদিনে ট্রাফিক আইন অমান্য করা, গাড়ির কাগজপত্র বা হেলমেট নেই, এমন মামলার সংখ্যা কমে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর