কুমিল্লায় দুই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি লোপাট

, জাতীয়

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-28 17:54:40

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ৩১২টি গ্রাম রয়েছে। এই ৩১২টি গ্রামের বেশিরভাগ স্থানেই এখন মাটি ও বালু খেকো রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। দুই শতাধিক অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে তারা প্রতিনিয়ত কৃষি জমির মাটি লোপাট করছেন। পুরো উপজেলা ঘুরে দেখলে মনে হয়- ‘এ যেন মাটি কাটার মহোৎসব চলছে’।

এদিকে, উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামেই এখন তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (উর্ভর মাটি) কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকদের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ সোহাগের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমানে এ উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে বেশির ভাগ জমিই দুই থেকে তিন ফসলি। বর্তমানে যে হারে কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে এতে আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল ব্যাপক হারে কাটা হচ্ছে। যদি এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ উপজেলায় চাষাবাদের জন্য জমি খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের কোন না কোন স্থানে ড্রেজার মেশিনে মাটি ও বালু উত্তোলন চলছে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে পকুর, কৃষি জমি, ডোবা ভরাট করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কোন কোন তিন ফসলি জমি ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। এতে আশ-পাশের তিন ফসলের কৃষি জমিগুলোও ভেঙে পড়ে কূপে পরিণত হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক জমির মালিক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ ব্যবসা চলছে। পুরো উপজেলার কৃষকরা এখন ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তাদের ভয়ে কথাও বলা যায় না।

তারা আরও বলেন, অভিযোগ দিলে প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই কিভাবে যেন ড্রেজার ব্যবসায়ীরা টের পায়। তখন তারা মেশিনপত্র বন্ধ করে চলে যায়। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবারও মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। আর যারা অভিযোগ করে তাদের উপর শুরু হয় অত্যাচার।

উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের কালারাইয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা এই গ্রামের ৪ বিঘা জমির মাটি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নেয়। পরে ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের তিন ফসলি জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ বিঘা জমি এখন ১০ বিঘায় পরিণত হয়েছে। এতে কেউ ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কম মূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল বলেন, এসব অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জেল-জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। অনেক স্থানে ড্রেজার ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ পেলেই আমরা এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর