নড়াইল: প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন থাকে লেখাপড়া শিখে প্রকৃত মানুষ হয়ে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চাকরি বা পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ব্যতিক্রমী এক স্বপ্নবাজ মানুষ হলেন কবি কামনা ইসলাম।
তার স্বপ্ন হল পথ শিশু বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখানো। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘কামনা শিশু সেন্টার, নামে একটি বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি তার এ কাজে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান ব্যক্তিসহ বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বলছি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বসুপটি গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের মেয়ে এবং লোহাগড়া লাহুড়িয়া ফাজিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলামের স্ত্রী কামনার কথা। শিক্ষক রিজাউল ইসলামের বাড়ি লক্ষ্মীপাশা শহরে। তাদের রয়েছে দুই ছেলে সন্তান।
জানা গেছে, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি নিরক্ষরমুক্ত সমাজ গড়তে কবি কামনা ইসলাম ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিজ উদ্যোগে লক্ষ্মীপাশায় গড়ে তুলেন ‘কামনা শিশু সেন্টার’ নামে একটি বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে সাধারণ এবং ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আবৃত্তি, সাধারণ জ্ঞান, ছবি অঙ্কন, বাংলা ও ইংরেজিতে সুন্দর হাতের লেখা শেখানো হয়। ছোট শিশুদের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান কবি কামনা ইসলাম। বর্তমানে কামনা শিশু সেন্টারে কবি কামনাসহ ৮জন শিক্ষক রয়েছেন। এ সব শিক্ষকদের কামনা নিজ চেষ্টায় সামান্য বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। তাদের অধিকাংশই সুবিধাবঞ্চিত। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পোশাক এবং বই, খাতা, কলম কিনে দিয়ে লেখাপড়া করান কামনা।
এদিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত (এম,এ) কামনা ইসলাম ইতোমধ্যে নারী কবি হিসেবে নড়াইল-লোহাগড়ায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ইতোমধ্যে তার ৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েকটি গ্রন্থ। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের একজন নিয়মিত স্বরচিত কবিতা আবৃতিকার।
কামনা শিশু সেন্টারের শিক্ষক শারমিন আক্তার, সোমা রানী, লিমা ও অঞ্জনা বলেন,‘সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান করার আনন্দই আলাদা। আমরা চেষ্টা করছি শিশুদের মানবিক গুণাবলিগুলো অর্জনের জন্য শিক্ষা দেয়ার।’
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মিম জানায়, পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি এখান থেকে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়।
শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলে, ‘আমরা গরীব-অসহায় মানুষ কামনা আপার কারণেই লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছি। তাই এই স্কুলে ভর্তি হয়েছি।’
লামিয়া নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে,‘আমরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত।’
কামনা শিশু সেন্টার সম্পর্কে লোহাগড়া কলেজের প্রভাষক আবু আব্দুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের যে স্বপ্ন দেখছেন, কবি কামনা সেই স্বপ্ন পূরণের একজন সৈনিক। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কামনা শিশু সেন্টারের সাফল্য আসবেই। এর ফলে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তার এ মহতী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।