মা ইলিশ সংরক্ষণে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-26 00:52:08

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ডিম ছাড়া ও প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বরিশালের প্রশাসন।

সরকার ঘোষিত টানা ২২ দিন (১৪ অক্টোবর-৪ নভেম্বর) ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় ও মজুদকারী এবং চাল বিতরণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত পরিচালনা করা হবে মোবাইল কোর্ট অভিযান।

বরিশাল জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আরো গেছে, মা ইলিশ সংরক্ষণে বরিশাল জেলা জুড়ে কঠোর অবস্থানে থাকলেও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে থাকবে জেলার হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা। আগৈলঝাড়া উপজেলায় নদী এলাকা কম থাকায় সেখানের মৎস্য কর্মকর্তাকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে পাঠানো হবে।

২২ দিন অভিযানের প্রথম দিনে বুধবার (১৪ অক্টোবর) সকালে কীর্তনখোলা নদীতে জেলা প্রশাসক জেলা এসএম অজিয়র রহমানের নেতৃত্বে অভিযানের উদ্বোধন ও মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

ইলিশৈ সংরক্ষণ অভিযানে মোবাইল কোর্ট। ছবি: বার্তা২৪.কম
ইলিশ সংরক্ষণ মোবাইল কোর্ট। ছবি: বার্তা২৪.কম

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৯ টি অভিযান ও ১০ টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ২ জেলে কে আটক, ২০ হাজার কারেন্ট জাল জব্দ, ৫ কেজি ইলিশ উদ্ধার, একটি করে মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

এদিকে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সরকারি ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর ।

উজিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ শিকদার বাচ্চু বার্তা২৪.কম'কে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিক ক্ষমতা গ্রহণ করায় ইলিশে উৎপাদন বেড়েছে বিগত বছরের তুলানায় কয়েকগুণ। যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মাঠ প্রশাসনের তদারকির পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায়। তাই সকলের উচিত এই ২২ দিন ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, বিনিময় ও মজুদ করা বিরত থেকে সরকার কে আরো সহায়তা করা। তাহলে আরো বেশি করে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে বলে আশাবাদী এই জনপ্রতিনিধি।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সাঈদ বার্তা২৪.কম’কে জানান, ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়,পরিবহন, বিনিময় ও মজুদ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

এসব নিষিদ্ধ কর্মকান্ডে জড়িত জেলে ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করায় কোন মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা বা উদাসীনতার প্রমাণ মিলে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে জানান, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধে নিয়মিত মৎস্য অভিযান পরিচালনা কাজে সহায়তা করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানায় গঠন করা হয়েছে পাঁচ ও দুই সদস্য বিশিষ্ট পুলিশের পৃথক দুটি টিম। পুলিশ রাতদিন এক করে মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করবে।

চলছে মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রশাসনের অভিযান। ছবি: বার্তা২৪.কম
চলছে মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রশাসনের অভিযান। ছবি: বার্তা২৪.কম

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বার্তা২৪.কম’কে জানান, বর্তমান সরকারের আমলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন সকলের উপলব্ধি মা ইলিশ সংরক্ষণ করলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই বরিশালে মা ইলিশ সংরক্ষণে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ এবং জেলেদের বাইরে অতিউৎসাহী কেউ ইলিশ শিকারে নদীতে গেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসক আরো জানান, মা ইংলিশ ধরা বিরত থাকা জেলেদের মাঝে বিতরণ করতে সরকারের দেয়া বিশেষ মানবিক সহায়তার ভিজিএফ চাল ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলেদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

চাল বিতরণে কোন ধরণের অনিয়ম দেখা দিলে সাথে সাথে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান এই জেলা প্রশাসক।

অপরদিকে, বরিশাল জেলায় মোট ৭৫ হাজার ৬৯১ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা এবং হত-দরিদ্র অনুযায়ী ৪৭ হাজার জেলের প্রত্যেকে ২০ কেজি করে মোট ৯৪০ মেট্রিক টন সরকারের দেয়া বিশেষ ভিজিএফ চাল বিরতণ করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর