করোনায় পাল্টে যাচ্ছে বরিশালের দুর্গোৎসবের চিত্র

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-24 18:22:21

বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বরিশালের পূজামণ্ডপ এলাকায় থাকছে না কোন বর্ণিল আলোক সজ্জা! জ্বলবে না কোন মিটমিট করে রঙিন বাতি! আর নির্মাণ করা হচ্ছে না দর্শনীয় কোন তোরণ!

তবুও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রেখে সাত্ত্বিক ভাবে স্বল্পপরিসরে বরিশালে আয়োজন করা হচ্ছে সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা।

এ বছর বরিশাল মহানগরে একটি বেড়ে ৪২ টি, সদর উপজেলায় ২২ টি, আগৈলঝাড়ায় দুইটি বেড়ে ১৫৭ টি, উজিরপুরে ১১০ টি, গৌরনদীতে একটি কমে ৮০ টি, বাকেরগঞ্জে তিনটি কমে ৭২ টি, বানারীপাড়ায় একটি কমে ৫৯ টি, মেহেন্দীগঞ্জে ২৪ টি, বাবুগঞ্জে একটি বেড়ে ২৪ টি, মুলাদীতে একটি কমে ১২ টি, হিজলায় একটি বেড়ে ১৫ টি সহ মোট ৬১৭ টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরের ৪২ টি পূজামণ্ডপ বাদে জেলার ১০ উপজেলায় ৫৭৫ টি পূজামণ্ডপে এ দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

গত বছর মহানগরীসহ এই জেলায় ৬১৬ টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর কম ও বেশি মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় একটি পূজা মণ্ডপ বেড়েছে। তবে এবছর প্রতিমা তৈরি ও আয়োজনে বাজেটের অর্থ কমেছে গত বছরের তুলনায় ৬০/৭০ শতাংশ।

নতুন বাজার শ্রী শ্রী কালিমায়ের মন্দিরে দুর্গা প্রতিমায় শেষ মুহূর্তে রং তুলির কাজ 

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবী দুর্গার আগমনে আনন্দ আর উৎসবের আমেজ বইছে বরিশালের প্রতিটি সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে। এখন প্রতিমার গায়ের শেষ রং তুলির আঁচড় আর ছোঁয়া দিচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। সেই সঙ্গে চলছে শেষ মুহূর্তে পূজামণ্ডপ,বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত মায়ের ভক্তরা। পাশাপাশি দশনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে মণ্ডপগুলোতে চলছে নানা রকমের সাজসজ্জায় কাজ।

নগরীর ফলপট্টির শ্রী শ্রী কালীমাতা ঠাকুররাণী দুর্গা পূজামণ্ডপ, সদরের রোডের শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির ও ফিসারী রোড এলাকায় স্বর্গীয় জুরাইন চন্দ্র মূখার্জী বাড়ি পূজা মণ্ডপ, নতুন বাজার শ্রী শ্রী কালিমায়ের মন্দিরে দুর্গা প্রতিমায় শেষ মুহূর্তে রং তুলির কাজ প্রায়ই শেষ। কোথায় কোথায় প্রতিমায় রংতুলির কাজ চলছে৷ আর একদিনের মধ্যে সব পূজামণ্ডপের রং তুলির কাজ শেষ হবে বলেও বার্তা২৪.কম কে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

মূখার্জী বাড়ির পূজামণ্ডপের কারিগর খোকন পাল বার্তা২৪.কম’কে জানান, গতবছর বিভিন্ন জায়গায়  ১২টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করেছি।এবছর করোনার কারণে তা কমে পাঁচটি প্রতিমা তৈরি করেছি। এতে করে আর্থিক অসুবিধায় পড়ে গেছি। সকল পেশার মানুষকে সরকার সহযোগিতা করলেও পালদের কোন সহযোগী করছে না। তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবি জানান এই কারিগর।

শ্রী শ্রী সংকর মঠ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক লিমন শাহা কানু বার্তা২৪.কম’কে বলেন, চলমান করোনার প্রভাবে দুর্গোৎসবের আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। গত বছরের দুর্গা পূজায় সাত লাখ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। এ বছর তা কমিমে তিনলাখ টাকার কাছাকাছি খরচের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে।

ফলে এবার থাকছে না কোন বাড়তি আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রসাদ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম। তবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রেখে সাত্ত্বিক ভাবে সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে।

বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানিক মূখার্জী বার্তা২৪.কম’কে  বলেন, বরিশালে আসন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পর্ব প্রায় শেষ। ভক্তরা অপেক্ষায় কাঙ্ক্ষিত দিনের। করোনা পরিস্থিতিতে এবার বরিশালের পূজামণ্ডপ এলাকায় কোন আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণ করা হবে না। সেই উদ্ধৃত টাকা দিয়ে দুর্গোৎসব উপলক্ষে অসহায় দুঃস্থদের খাবার ও পোশাক বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপের সামনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার জন্য পানি, সাবান, ও স্যানিটাইজার রাখা হবে।পাশাপাশি পূজামণ্ডপে প্রবেশ ও পরির্দশনে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই  স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিধি মেনে দুর্গোৎসব পালন করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন এই সাধারণ সম্পাদক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর