বানারীপাড়ার ভাসমান চালের হাট

বরিশাল, জাতীয়

সিদ্দিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:25:32

বরিশাল: বানারীপাড়ার লঞ্চঘাট সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীতে বসে ভাসমান চালের হাট। সপ্তাহে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার এখানে বসে চালের মূল ভাসমান হাট। তবে রবি ও বুধবারেও চাল বেচাকেনা হয়। কিন্তু রবি ও বুধবারের হাটকে বলা হয় গালার হাট। ওই দুইদিন খুব সকাল থেকেই শতাধিক নৌকায় করে কারবারি এবং গৃহস্থরা চাল নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। বেচাকেনা চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। অনেকে আসেন খালি নৌকা নিয়ে চাল কিনতে। পুরো প্রক্রিয়াটাই চলে নদীতে বসে।

জানা গেছে, বানারীপাড়া উপজেলার নলেশ্রী, দিদিহার, দান্ডয়াট, বাইশারী, মসজিদবাড়ী, আউয়ার, কালিরবাজার, খোদাবখ্শ, মলঙ্গা, চাখার, বাকপুর, ঝিরারকাঠী, ভৈত্বসর, চালিতাবাড়ী, চাউলাকাঠী, কাজলাহার, ব্রাহ্মণকাঠী, জম্বুদীপ, নাজিরপুরসহ আশপাশের এলাকায় শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ এ কাজে জড়িত ছিল। কিন্তু আজ তার সংখ্যা খুবই সীমিত।

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বানারীপাড়ার লঞ্চঘাটে ভাসমান এই চালের হাটে কথা হয় একই উপজেলার বাইশারী গ্রামের কৃষক মো. সেকান্দারের (৬৫) সঙ্গে।

তিনি বলেন,‘নতুন নতুন রাইস মিল চালু হইছে। আগের মতো বেচাকেনাও নাই। আর এহন কেউ আগের মতো গৃহস্থের চাল খাইতে চায় না। পূর্বে এই বাজারে অনেক দূর-দূরান্তের মহাজন আর পাইকাররা আইতো। কিন্তু এখন স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশের দোকানদার ছাড়া কেউ আহে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে বাপ-দাদারা এই বাজারে নৌকা ভরে বিভিন্ন জাতের চাল নিয়া আইতো। ভালো বেচাকেনা করে বাড়ি যেত। আর এখন আশপাশে নতুন নতুন মিল হওয়ায় ভাসমান বাজারের চাহিদা কমে গেছে। ২০-৩০ বছর আগেও এই বাজারে নৌকায় যে পরিমাণ চাল বিক্রি হতো, আজ তা তিনভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।’

কৃষক সেকান্দার বলেন,‘আগে দেশের মধ্যে বানারীপাড়ার এই ভাসমান চালের হাটের সুনাম ছিল অনেক। এখানের মতো চাল বেচাবিক্রি আর কোথাও হতো না। কিন্তু আজ বাজারের এই দুরবস্থা। বর্তমানে এই ভাসমান বাজারে আউশ, বালাম ও গোডা চাল বিক্রি হয়। প্রতি মণ আউশ চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। আর গোডা চাল প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ টাকা। এখানে বাজারে দিনে কয়েকশ মণ চাল বিক্রি হয়।

শুধু সেকান্দার নয়, রুস্তম আলী মহাজন, সরোয়ার, করিম ব্যাপারীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবার অবস্থা একইরকম। ধান কিনে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে যে দামে চাল বিক্রি করেন, তাতে লাভ থাকে সীমিত। তাই বর্তমানে কেউ কেউ এই চালের ব্যবসা ছেড়ে অন্য কিছু করার চিন্তা করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর