বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়কে ঘিরে কারাগার থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। এদিকে আইনজীবীসহ মামলা সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কাউকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা থেকেই কারাগার থেকে আদালত আধা কিলোমিটার পর্যন্ত এ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বরগুনা জেলা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত রিফাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে উপস্থিত করার সময় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য কঠোর নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে আদালত চত্বর। এছাড়াও, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্য।
আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে কারাগার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সরব উপস্থিতিও সকাল থেকেই দেখা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর সকল আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। গত ১৪ অক্টোবর বুধবার আদালতে উপস্থাপিত রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শেষে আদালত এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলো- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫) রাতুল সিকদার জয় (১৬) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)। চলতি বছরের গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এদিকে এ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ৮ আসামি জামিনে রয়েছেন ও জেলা কারাগারে শিশু ওয়ার্ডে রয়েছেন ৬ জন।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শাহনেওয়াজ রিফাতকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। বিকেলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রিফাত মারা যান। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি ১৪ জন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। খালাস প্রাপ্তরা হলেন রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. মুসা, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন। এদের মধ্যে মুসা এখনও পলাতক।
বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. মফিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে বরগুনার প্রতিটি চেকপোস্টে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে আদালত চত্বর থেকে কারাগার পর্যন্ত। যেকোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ঠেকাতে পুলিশ ও র্যাব থেকে মাঠ পর্যায়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে।