অবসরের ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও কপালে জোটেনি পেনশন সুবিধা!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড় | 2023-08-31 12:08:54

পঞ্চগড় শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় সরকারী জরাজীর্ণ ভাঙা বাড়িতে পরিবার নিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিনরাত্রি অতিবাহিত করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মাঈন উদ্দিন আহম্মেদ।

চাকরি থেকে অবসর নেয়ার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তার কপালে জোটেনি পেনশন সুবিধা।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জেলা শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও (পওবি) সার্কেলের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে যথাসময়ে চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়ায় মাঈন উদ্দিন নামে ওই কর্মচারী এখনও তার পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া তিনি পেনশন সুবিধা পাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রধান কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফরে বিভিন্ন সময় আবেদন করলেও এতে মিলেনি কোন আশ্বাস কিংবা তার প্রাপ্ত পেনশন সুবিধা।

এসময় লিখিত আবেদনে জানা যায়, বৃদ্ধ মাঈন উদ্দিন ১৯৬৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পাম্প চালক (অনিয়মিত) হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠাকুরগাও পওর সার্কেল হতে কর্মরত সকল অনিয়মিত পাম্প চালকদের নিয়মিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হলে এসময় ওই তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে যায় মাঈন উদ্দিনের।

পরে মাঈন উদ্দিন তালিকা থেকে তার নাম বাদ পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী পরিদফতরে আবেদন করলে তাকে কি কারণে তালিকা থেকে বাদ ও কেন নিয়মিত করা হয়নি এ নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ ৭ দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য ১৯৯৯ সালে পাউবো’র ঠাকুরগাঁও সার্কেলের তত্ত্বাবধাায়ক প্রকৌশলীকে চিঠি দিলে ঠাকুরগাঁও পওর সার্কেলে প্রকৌশলী চিঠিতে জবাব দিয়ে জানায় ১৯৮০ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অনিয়মিত কর্মচারী আত্মীকরনের জন্য দেয়া তালিকা থেকে ভুলবশত মাইন উদ্দিনের নাম বাদ পড়ে যায়।

পরে তাকে ১৯৬৯ সালের ১লা মার্চ হতে ওই চিঠিতে নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয় এবং ওই চিঠির আলোকে কর্মচারী পরিদফতরের পরিচালক ২০০০ সালের ২৬ জুলাই থেকে এক আদেশের মাধ্যমে তাকে ১ মার্চ ১৯৬৯ সাল হতে নিয়মিত করে আদেশ দেয়া হয় এবং ২০০০ সালে ১০ মার্চ তাকে চাকুরী হতে পূর্ণ অবসর প্রদান করা হয়। পূর্ণ অবসরের পূর্বে তাকে ১ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে নিয়মিত পদে আত্তীকরণ দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ এক বছর চার মাস দশ দিন হিসেব করে পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি হিসেবে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭২০ টাকা প্রদান করা হয়।

তবে মাঈন উদ্দিন পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত ২০০৭ সালের তারিখে পঞ্চগড় সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক বরাবরে আবেদন করলে সেই আবেদন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব রক্ষণ পরিদপ্তরের প্রেরণ করা হলে ওই কর্মচারীর গ্র্যাচুইটির পরিবর্তে তাকে পেনশন প্রদানের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়।

সর্বশেষে তিনি পঞ্চগড়ে দুর্নীতি বিরোধী গণশুনানিতে পুনরায় আবেদন করলে দুদক পানি উন্নয়ন বোর্ডের পঞ্চগড় পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর বিষয়ে পদক্ষেপ করে কমিশনারকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করে।

এবিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন কর্মকর্তার ভুলের কারণে আজ আমি পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে শেষ সময়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। ভুল তো আমার না সবাই পেনশন পেলেও আমি কেন পাবো না। ৩৩ বছর চাকরি করে গত ২০ বছর আগে অবসর গ্রহণ করছি। চলার কোন উপায় নাই, টাকার অভাবে নিজের যেমন চিকিৎসা করাতে পারছি না তেমনি বাড়ি ভাড়া নিতে পারছি না। তাই জরাজীর্ণ ভাঙা বাড়িতে বসবাস করছি পরিবার নিয়ে। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, আমি পঞ্চগড় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই প্রথম আপনাদের মাধ্যমে শুনলাম। তবে ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী যদি এসে আমাকে তার সমস্যার কথা বিস্তারিত এসে জানায় তাহলে আমি বিষয়টি অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর