বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন বিপিএ’র নেতৃবৃন্দের

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 18:52:41

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ ফিজিক্যালথেরাপি এসোসিয়েশন (বিপিএ) এর নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বারে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিপিএ’র নেতৃবৃন্দ।

ফুল দেয়া শেষে বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ায় অংশ নেন নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির ইতিহাসটা অনেক গর্বের। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের তোপখানা রোডের ফিরোজা বারী শিশু পঙ্গু হসপিটালে প্রথম ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু হয়। ফিজিওথেরাপি বিভাগটি চালু করতে তৎকালীন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী অনুদান দেন এবং সেখানে ফিজিওথেরাপির ওপর শর্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীকালে প্রয়াত অধ্যাপক আবুল হোসেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে অধ্যাপক আবুল হোসেনের হাত ধরে অধ্যাপক নুরুল আলম, অধ্যাপক গোলাম হোসেন, ডা. হাসিনা বানু ও আরও দু’একজন স্কলারশিপে পশ্চিম পাকিস্তানের জিন্নাহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল থেকে ফিজিওথেরাপিতে প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারি হসপিটালে কাজ শুরু করেন।

ফুল দেয়া শেষে বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ায় অংশ নেন নেতৃবৃন্দ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মার্কিন অর্থোপেডিক সার্জন আর জে গাস্ট, যিনি তার টিম নিয়ে সে সময় ভারতের কেরালায় কাজ করছিলেন তিনি সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় আমাদের দেশে আসেন। সরাসরি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তিনি সে সময় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি ওয়ার্ডে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় ডা. আর জে গাস্ট আরআইএইচডি নামক একটি প্রকল্প চালু করেন, যেটা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত। এ আরআইএইচডিতে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে অর্থোপেডিক কোর্স এবং ফিজিওথেরাপি ডিগ্রি কোর্স একসঙ্গে শুরু করেন ডা. আর জে গাস্ট। সে সময় অধ্যাপক আবুল হোসেন, অধ্যাপক নূরুল আলম, অধ্যাপক গোলাম হোসেন ও বিদেশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা ওই ফিজিওথেরাপি কোর্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ কোর্সটি চালুর মাধ্যমে শুরু হলো বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের এক নতুন অধ্যায়। আরআইএইচডি বা পঙ্গু হাসপাতালে কোর্সটি অর্থোপেডিক কোর্সের পাশাপাশি দুর্দান্তের সঙ্গে চলতে থাকে। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই ফিজিওথেরাপি কোর্সটি নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রথম দুই ব্যাচে ২৫ জন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক পাস করে অনেকেই সরকারি স্পেশালাইজড হসপিটাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রথম শ্রেণির পদে চাকরিতে যোগদান করেন এবং অনেকেই উন্নত বিশ্বে ফিজিওথেরাপির চাহিদার কারণে বিদেশে পাড়ি জমান।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর থেকেই ফিজিওথেরাপি কোর্সটি বন্ধ করতে তৎপর হলেন একদল চিকিৎসক এবং ১৯৮০ সালে প্রফেসর আর জে গাস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তৎকালীন এমবিবিএস চিকিৎসকরা কোর্সটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। বাংলাদেশে এমবিবিএসরা জন্ম দিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের, যারা কখনওই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নন। শুরু হলো এদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কালো অধ্যায়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের বা ফিজিওথেরাপিস্টের নিশ্চিহ্ন করতে রাতারাতি দেশের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ফিজিওথেরাপি বিভাগের নাম পরিবর্তন করে করা হলো ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের নানা তৎপরতায় পরবর্তীকালে ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোর্সটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস), ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) এর পাশাপাশি ফের চালু করেন। কোর্সটি বর্তমানে বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) নামে পরিচিত। কোর্সটি চালু হওয়ার পর আবারও বাংলাদেশ পেতে শুরু করল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট।

গত ২৪ অক্টোবর ২০২০ বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি এসোসিয়েশন(বিপিএ)এর নির্বাহী কমিটির ইলেকশন নিটোরে তথা পঙ্গু হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীদের সংগঠন বিপিএ’র সভাপতি ডা.দলিলুর রহমান,মহাসচিব ডা.ফরিদউদ্দিন,সহসভাপতি ডা.ইশরাত জাহান,ডা.আরিফ জুবায়ের,ডা.মন্জুরুল ইসলাম,ডা.তাশিকুল ইসলাম, ডা.জগলুল হাই, ডা.মাকসুদুল আলম,ডা.মহসীন কবির,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা.মিজানুর রহমান, ডা.ওসমান গনি, ডা.তোফায়েল হোসেন, ডা.আকশাফুল ইমাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.তৌহিদুজ্জামান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.রেবেকা সুলতানা, কোষাধক্ষ ডা.তামজিদুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ডা.নাসির উদ্দিন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা.আনিসুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা.নাফিস খান, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা.মাহমুদুল হাসান,অপিস সেক্রেটারি ডা.মনিরুজ্জামান খান, প্রচার সম্পাদক ডা.উম্মে সালমা এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে ডা.প্রদীপ কুমার সাহা,ডা.বায়েজিদ হোসেন,ডা.মন্জুরুল আলম ও ডা.আল মামুনুর রশিদ নির্বাচিত হোন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর