একজন ব্যতিক্রমী জেলা প্রশাসক ও তার কর্ম

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 08:28:52

কর্মই একমাত্র তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান। কর্ম পাগল এই মানুষটি সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তাঁর উপর অর্পিত সকল সরকারি দায়িত্ব পালনে নিরলস পরিশ্রম করে চলছেন। তাঁর সাথে কোন বিশেষ প্রয়োজনে, রাত আর দিনই হোক তাঁর দেখা মেলেনি এমন ঘটনা বিরল! দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতা, চিকিৎসাবঞ্চিতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, করোনায় সংকটে জেলা প্রশাসনের পুরো টিমকে নিয়ে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করানো, লকডাউনে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বানভাসি মানুষকে খাবার পৌঁছানো-নেই যা তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করছেন না।

অতুল সরকার, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। হ্যাঁ-এতক্ষণ তার কথাই বলছিলাম। সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন এই জেলা প্রশাসক। আর তার টিম যা ‘টিম ফরিদপুর’ নামে ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অতুল সরকার

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাইজেশনে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ই-নথি ব্যবস্থাপনায় পরপর ছয় বার তার জেলা প্রথম স্থান অর্জন করে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপস তৈরিসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা করেছেন।

মাত্র এক বছর কয়েক মাস হয়েছে তিনি ফরিদপুর জেলায় এসেছেন। নির্ভীক, নিরহংকার ও সদালাপী এই মানুষটির মনে রয়েছে নানান স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী ভাবনা যা তিনি ফরিদপুরে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। শিল্প-সাহিত্য এবং শিক্ষা ও সুকুমারবৃত্তির চর্চায় ফরিদপুরকে দেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জেলায় পরিণত করতে চান তিনি।

২০১৯ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত সভায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ৯০ ডিগ্রি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা রেখার ছেদবিন্দুতে "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক মহাকাশ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার" ও "সাইন্স সিটি" গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।

করোনা সম্পর্কে সচেতনতার অংশ হিসেবে মানুষ মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০২১-২০৪১, র্নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এবং করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনাসহ সরকারের সকল নির্দেশনা ও নীতির আলোকে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সমগ্র ফরিদপুর জুড়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এক নতুন উদ্দীপনা।

শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি নতুন একটি স্লোগান তৈরি করেছেন আর তা হল হলো ‘আমার গ্রাম আমার শহর ফরিদপুর হবে শিক্ষানগর।’

মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য ভূমি ও গৃহের সংস্থান, প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পাঠাগার গড়ে তোলা, উপজেলা পরিষদে মুজিববর্ষ পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনাসহ মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলার সকল বিভাগের সমন্বয়ে ১০০টি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে ভিডিও কনফারেন্সে প্রশাসনের কাজ পরিচালনা

গত এক বছরে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বহুবিধ কাজের মধ্যে কয়েকটিতুলে ধরা হলো:-

জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ

ফরিদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। শিক্ষার প্রতি ফরিদপুরবাসীর অনুরাগ সুবিদিত। এ জেলাটি সুপ্রাচীন এবং জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও জেলা শহরে মাধ্যমিক পর্যায়ে মাত্র দুটি সরকারি স্কুল রয়েছে। এছাড়া ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে কাঙ্ক্ষিতমানের স্কুলের স্বল্পতা থাকায় প্রতি বছর সরকারি স্কুলগুলোর ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ জেলায় মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবের বিষয়টি অনুভূত হয়ে আসছে এবং বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাজের কাছ হতে বিষয়টি বারবার উত্থাপিত হয়েছে এবং প্রস্তাবনা এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের অন্যতম এজেন্ডা মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর কর্তৃক ১ জানুয়ারি, ২০২০ সালে ঝিলটুলীতে ০.৬৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় “জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ, ফরিদপুর”। ইংরেজী ভার্সনে পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে প্লে হতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পলিচালিত হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা হতে পাঠদানের অনুমতিক্রমে আগামী ২০২১ সাল হতে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভার্সনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

 করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন সফটওয়্যার

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে  বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা। এই করোনা চ্যালেঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ফরিদপুর করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন’ (www.fcmro.com) শীর্ষক একটি ওয়েবসাইট প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে একদিকে যেমন মানবিক সহায়তা প্রাপ্ত এবং প্রাপ্তিযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে অপরদিকে এ জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, তাদের টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য, করোনা থেকে মুক্তি প্রাপ্তদের সংখ্যা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও হোমকোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়মিত আপডেট করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া, ডাটাবেজ প্রণয়নের মাধ্যমে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণের তথ্য-প্রমাণও নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার

বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে এক সময়ের পিছিয়ে পড়া ফরিদপুরও ক্রমশ একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয়, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডও একই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাপ মোকাবিলায় ফরিদপুরে একটি আধুনিক মানের ‘এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ড

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিআর, কাবিটা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী রয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সরকার তাৎক্ষণিক মানবিক সহয়তা প্রদান করে থাকেন। জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর উপকারভোগীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে জেলার সকল উপজেলায় QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল এবং করোনা আক্রান্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ব্র্যান্ডিং মেলা:

ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। পাট ও পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্যের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করে পাটকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করা, পাটচাষি ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় মাসব্যাপী ‘ব্র্যান্ডিং মেলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’কে উপজীব্য করে জেলার সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গনে আয়োজিত এই মেলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার, ‘ব্র্যান্ডিং কর্ণার’, ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার’, প্রতিবন্ধিদের জন্য ‘সুবর্ণ নাগরিক কর্ণার’, ‘এসডিজি কর্ণার’সহ মোট ১২০টি স্টল অংশগ্রহণ করে। মেলায় মাসব্যাপি জেলার বিভিন্ন পাটকল ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রয় করেন।

অটোমেটেড কমপেন্সেসন পেমেন্ট সিস্টেম

জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ করা  এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাদের জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ নির্ধারিত অর্থ স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে প্রদান করা। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তি হ্রাসে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম দূরীকরণে  অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার TVC (Time, Value, Cost) কমানোর অভিপ্রায়ে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর কর্তৃক অনলাইন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের সফটওয়্যার Automated Compensation Payment System (www.la.faridpur.gov.bd) প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার ক্ষতিপূরনের চেক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা ঘরে বসেই জানতে  পারছেন, কোন অভিযোগ থাকলেও তা সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা সম্ভব হচ্ছে এবং  চেক প্রাপ্তির তারিখ ও সময়ও মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

মিট দ্য ডি.সি/ইউ.এন.

শিক্ষার আলোকবর্তিকা সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় “আমার গ্রাম আমার শহর-ফরিদপুর হবে শিক্ষা নগর” স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী ও অনন্য উদ্যোগ “মিট দ্য ডিসি”। জেলা পর্যায়ে বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসকল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা ১০ জন নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মিট দ্য ডিসি’। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের তার স্বাক্ষরিত কার্ড ও উপহার প্রদান করেন।

আট আনায় জীবনের আলো কেনা

কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলা এবং সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হচ্ছে একটি গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও গ্রন্থের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় বন্ধন যার সফল প্রয়োগ ঘটেছে "আট আনায় জীবনের আলো কেনা" শীর্ষক একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ফরিদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো গ্রন্থ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ফরিদপুরে অধ্যয়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে তাদের সঞ্চিত টিফিনের অর্থ হতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মাসে মাত্র ৫০ পয়সা (আট আনা) নিয়ে এই গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

 ভূমিহীনদের ভূমি গৃহ প্রদান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অঙ্গীকার ‘মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর জেলার বিশ শত (২০০০ জন) ভূমিহীনকে ৩২৩ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫৫৫ জন ভূমিহীনকে ৭৮ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১০৭১টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র এই অগ্রাধিকার প্রকল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এ জেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হবে । ইতোমধ্যে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত (ভূমিহীন ও গৃহহীন) উপকারভোগীদের জন্য ১৪৭০ টি গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সেবা প্রদানে ডিজিটালাইজেশন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জনসাধারণকে যেসব সেবা প্রদান করা হয়ে থেকে তার মধ্যে বেশ কিছু সেবা যেমন রেকর্ডরুম থেকে পর্চা প্রদান, সকল ধরনের ডিলিং লাইসেন্স নবায়ন, দাপ্তরিক যোগাযোগ, ই-মিউটেশন প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাটবাজার ব্যবস্থাপনার জন্য ‘অনলাইন চান্দিনা ভিটি ও ভিপি সম্পত্তি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’,  এবং ‘স্মার্ট আর্মস লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত সকল সেবার ডিজিটালাইজেশন করা।

ই-নথিতে সাফল্য

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ই-নথিতে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের তৎপরতায় জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত টানা ৬ বার এ ক্যাটাগরির ২৫টি জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়।

ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল

করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফরিদপুরে তখন জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষকদের সাথে একটি ভার্চুয়াল মিটিং করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ফরিদপুরে একটি অনলাইন ভিত্তিক স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্কুলটির নামকরণ করা হয় “ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল” এবং বাংলায় “আমার ঘরে আমার স্কুল”। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সর্বত্র ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এই স্কুলের কার্যক্রম। শিক্ষকগণের পাঠদানের সেই ভিডিওগুলি যারা সরাসরি দেখতে পারে না তাদের জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে এবং সেই ওয়েবসাইটে ভিডিওগুলো আপলোড করা হয়েছে। একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানেও ভিডিওগুলি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের পাঠদানের ভিডিও স্থানীয় ডিশ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এপ্রিল-মে মাসে গৃহীত ফরিদপুরের এই কার্যক্রম খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং তা পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

উদ্যোক্তা মেলা কর্মসংস্থান

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার প্রভাবে অনেক মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে স্থানীয় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন কর্মে মেতে ওঠে। তারা স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ ঘরে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে এবং তা অনলাইনের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করে। বিষয়টি নিম্নস্বাক্ষরকারীর নজরে আসার সাথে সাথে তিনি দুই গ্রুপে প্রায় চার শতাধিক উদ্যোক্তার সাথে  মিলিত হন এবং তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা করেন।

উন্মুক্ত গণশুনানি

প্রায় প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কখনো জেলা প্রশাসকের কক্ষে অথবা সম্মেলন কক্ষে সপ্তাহের প্রতি বুধবার গণশুনানি হয়ে থাকে। ফরিদপুরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সপ্তাহের প্রতি বুধবার নিয়মিত গণশুনানির বাইরেও উন্মুক্ত গণশুনানির আয়োজন করছে এবং সাথে সাথেই সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভাব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। যেটা তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।

জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি (DLMA)

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী, উপসহকারী, সার্ভেয়ার, কানুনগো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্য দেশের কোথাও সমন্বিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত একাডেমিক ও প্রায়োগিক তথা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় জেলা পর্যায়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা ভর করে। এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য এ জেলার সদরপুর উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ০৫.০০ একর জায়গা নিয়ে “জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি” নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মুজিববর্ষ পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থগার নির্মাণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় অথবা উপজেলা পরিষদকে ঘিরে মুজিববর্ষ পার্ক নামে দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে এ জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় সমাপ্তির পথে।

এ জেলার ৮১ টি ইউনিয়ন পরিষদে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অব্যবহৃত কোন কক্ষে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গণগ্রন্থাগার” নামে একটি করে লাইব্রেরি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গ্যালারী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর জেলায়  এবছর মুজিববর্ষে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে মেমোরিয়াল, স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যবাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর-এ একটি নান্দনিক ও শৈল্পিক কর্মসমৃদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্যালারী’ শিরোনামে একটি দ্বিতল বিশিষ্ট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী’র সকল প্রচেষ্টা শতভাগ সফল করার লক্ষ্য নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বাধীন টিম ফরিদপুর। মাত্র এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার কর্তৃক যে সকল ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ  গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা যে কোন বিচারে অনন্য প্রশংসার দাবিদার। শুভকামনা জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও তার টিম "টিম ফরিদপুর" এর জন্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর