হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপি-জামায়াত সক্রিয়

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 12:41:58

হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ১৮ সদস্যের কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে থাকা বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে বলে রাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ধর্মভিত্তিক বড় এই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি অংশের নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা শফীপন্থিদের বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।

সূত্র মতে, কাউন্সিল সামনে রেখে জামায়াত-শিবির কৌশলে হেফাজতে ইসলামে প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। আহমদ শফী জীবিত থাকতে সংগঠনটি চট্টগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রিত হলেও বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠরা তা ঢাকাকেন্দ্রিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের যে কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে অনেকেই সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। কেউ কেউ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা জাফর আলম নিয়মিত গোপন বৈঠক করে কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। তালিকাটি কাউন্সিলের দিন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামায়াতে ইসলামের অনুগতরা ব্যাপকভাবে আনাগোনা শুরু করেন। তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকেন। হঠাৎ করে ওই মাদ্রাসায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর আনাগোনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া সেখানে হেফাজতের বিতর্কিত নেতা মুফতি হারুন ইজহার ও মাওলানা মামুনুল হকের যাতায়াতও বেড়ে যেতে থাকে। মামুনুল হকের স্ত্রীসহ শ্বশুরপক্ষের অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্নিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জানাজার দিন লক্ষাধিক অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। জানাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও শিবিরের নেতাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া আহমদ শফীর লাশ বহনকারী খাটিয়া জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ অন্তত ৪০ জন জামায়াত-শিবির নেতা বেষ্টনী করে রাখেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে বলা হয়, মাওলানা মামুনুল হক কৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধ তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক সংগঠন হলেও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সংগঠনটিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকেই হেফাজতের নতুন মহাসচিব করার জন্য সংগঠনটিতে থাকা বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ অংশটি চেষ্টা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে হেফাজতের নেতৃত্বকে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রভাবমুক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক করতে শফীপন্থি কোনো আলেমকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে না রাখতেও নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন যা ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কথিত ইসলামীবিরোধী ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। হেফাজতে ইসলামের মূল শক্তি কওমি মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসাগুলো হতে শিক্ষা লাভ করা কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীগণ। অপরদিকে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই কওমি আলেমদের সাথে বিতর্কিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামের আক্বীদাগত (আদর্শগত) পার্থক্য বিদ্যমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর