ট্রাক চাপায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন শেষ শেফার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-24 10:14:11

যশোরের শার্শায় স্কুল যাওয়ার পথে ট্রাক চাপায় শেফা নামে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী ও এক ভ্যান চালক নিহত হয়েছে। এসময় আরো দুই ছাত্রীর হাত ও পা ভেঙে গুরুতর জখম হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে যশোরের নাভরণ-সাতক্ষী সড়কের নেহা ফিলিং তেল পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী শেফা নাভরণের কাঠুরিয়া গ্রামের শামি হোসেনের মেয়ে ও নাভরণ বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ভ্যান চালক হানেফ একই গ্রামের মুজরুদ্দীর ছেলে।

আহত ছাত্রীরা হলেন- নিহত শেফার বান্ধবী আবুল কালামের মেয়ে জ্যোতি ও কবিরের মেয়ে অহনা।

পরিবারের আহাজারি। ছবি: বার্তা২৪.কম

নিহতের পরিবার জানায়, শেফা, অহনা আর জ্যোতি তিন জনেই নাভরণ বুরুজবাগান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। শিক্ষকের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট লিখে তিন বান্ধবী প্রতিবেশি হানেফের ভ্যানে চড়ে খাতা জমা দিতে যাচ্ছিল স্কুলে। হঠাৎ নাভরণ-সাতক্ষীরা সড়কে যশোর থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় ভ্যানে। এতে ভ্যান চালকসহ চার জনেই গুরুতর জখম হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনা স্থলে মারা যায় শেফা। পথচারীরা এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে অন্য তিনজনের। জ্যোতির হাত ভেঙে যায় ও অহনার ভেঙে যায় পা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকালে মারা যায় ভ্যান চালক হানেফ।

গ্রামবাসীদের মানববন্ধন। ছবি: বার্তা২৪.কম

এদিকে দুই জন নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিকালে গ্রামবাসী নাভরণ-সাতক্ষীরা সড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে মানবন্ধন করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বুরুজ বাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমিনুর রহমান জানান, একজন মেধাবী ছাত্রীকে হারালাম। গতকাল রাতেও শেফা মাকে বলেছিল ডাক্তার হবে। এক দিনের ব্যবধানে শেফার সেই মানব সেবার স্বপ্ন পিশে দিয়েছে বেপরোয়া ঘাতক ট্রাক চালক। আর কোন দিন সে মা-বাবাকে তার বড় হওয়ার গল্প শোনাতে পারবে না। আর মাও মেয়ের মুখে মা ডাক শুনবেনা। ঘাতক ট্রাক চালকের বিচার চাই।

 দিশেহারা নিহতের পরিবার। ছবি: বার্তা২৪.কম

এদিকে শুধু শেফা না দিনমজুর একজন ভ্যান চালকের পরিবারেরও সব স্বপ্ন মুছে দিয়েছে এ ঘাতক ট্রাক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি। ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফার দুই বান্ধবী অহনা ও জ্যোতি। তবে জ্যোতি হাত ভেঙে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অহনা জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে হাসপাতালে। একই গ্রামে দুই জনের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন হোসেন জানান, ঘাতক ট্রাক দুই পরিবারের স্বপ্ন পিশে দিয়েছে। ব্যস্ততম সড়কটির দুই ধারে গর্ত থাকায় প্রায় পান ঝরছে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। নিরাপদ সড়ক আর সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

নাভরণ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক(এসআই) টিটু কুমার দাস জানান, নিহত দুই জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাক ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর