‘এই নিয়া চৌদ্দবার বাড়ি সরবার নাগচি’

রংপুর, জাতীয়

রেজাউল করিম মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:27:07

লালমনিরহাট: করালগ্রাসী তিস্তা একে একে গিলে খাচ্ছে আবাদি জমি, বসতভিটা। ভয়াবহ ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর কান্নায় তিস্তাপাড়ের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।

‘একবার না, দুইবার না, এই বার নিয়া চৌদ্দবার বাড়ি সরবার নাগচি। গত বুধবার রাতে হামার একটা ঘর নদীত ভাসি গেইচে। বাকি ঘর তিনটা খুলচি। এগুলা নিয়া এলা হামরা কোনটে যাই বাহে? এই নদী হামাক ফকির বানাইছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্বাস উদ্দিন।

এই বৃদ্ধ বয়সে এসে ছেলেদের আয়ে গত বছর দেড় লাখ টাকায় ১২ শতাংশ জমি কিনে বাগডোরা মধ্যপাড়ায় বসতভিটা বানান আব্বাস আলী। সেটাও গত বুধবার মধ্যরাতে তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে। একটি ঘর ভেসে গেলেও বাকি ঘরগুলো সরিয়ে নিতে পেরেছেন নিরাপদে। কিন্তু বসতভিটা বানানোর আর জায়গা নেই। ঘর খুলে রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছেন।

ভাঙনের শিকার ওই এলাকার কালাম মিয়া জানান, তার ঘরটি সরিয়ে রাখার মতো জায়গা নেই। তাই অনিরাপদ হলেও নদীর কিনারে থাকছেন তারা। রাতে স্বামী-স্ত্রী পালাক্রমে পাহারা দেন।

শুধু আব্বাস উদ্দিন, কালাম নন, গত ১৫ দিনে বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। জায়গার অভাবে কিছু পরিবার কাজের সন্ধানে পরিবার পরিজনসহ পাড়ি জমিয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। কেউ আবার আত্মীয়ের বাঁশ বাগান বা ডোবা উঁচু করে, কেউ বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণের টাকায় জমি বন্দক নিয়ে নতুন স্বপ্ন বাঁধছে। কেউ আবার রয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বাহাদুরপাড়া গ্রামের গরিবুল্লাটারী পাড়াটি গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত রাতে সর্বশেষ মাজেক মিয়ার বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপাড়া মসজিদ, ব্রিজ, কালভার্টসহ কয়েক হাজার পরিবার। ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজাহারুল ইসলাম জানান, গত এক মাসে তার ইউনিয়নে ১৩০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের মাঝে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে। ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর