জাতীয় ঐক্যের ঘোষণায় দেশ শাসনের ফর্মুলা

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:02:07

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

এসময় তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজসহ জনগণকে সুসংগঠিত করে আমরা অভিন্ন দাবী আদায় এবং লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস গণআন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা প্রদান করছি।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের দাবিসমূহ-

১. আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

২. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

৩. 'কোটা সংস্কার' এবং 'নিরাপদ সড়ক' আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।

৪. নির্বাচনের ০১ (এক) মাস পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর ১০ (দশ) দিন পর্যন্ত মোট ৪০ (চল্লিশ) দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত করতে হবে।

. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমূখি করতে হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

অপরদিকে, ৯ টি লক্ষ্য-

১. বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তি কেন্দ্রীক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ যুগোপযোগী সংশোধন করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ন পদে নির্দোলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।

২. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন এবং ইতিপূর্বে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

৩. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগত্যা হিসাবে বিবেচনা করা।

৪. কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।

৫. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৬. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃংঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বন্টন ও জনকল্যাণমুখি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

৭. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।

৮. 'সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়' এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পারিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯. বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সংঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পূনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

অভিন্ন দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে জোটবদ্ধ নির্বাচন ও সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা স্পষ্ট অঙ্গীকারসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত লক্ষ্য ও কর্মসূচী প্রণয়ন করে জনসম্মুখে প্রকাশ, প্রচার ও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে বলে জানান মান্না।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্পধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর