করোনাভাইরাস: বাড়ছে সংক্রমণ, কমেছে সচেতনতা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-24 02:53:41

রংপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছে না জনসচেতনতা। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও। বেশির ভাগ মানুষই এখন মুখে মাস্ক পরছেন না। আর কেউ কেউ সঙ্গে রাখলেও তা থাকছে প্যান্ট-শার্টের পকেটে। এভাবে সরকারি নির্দেশনা না মানা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শীতের তীব্রতা শুরু না হতেই রংপুরে বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমিত রোগী।

এদিকে সোমবার (১৬ নভেম্বর) রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ ২৮ জনই করোনা পজিটিভ। নতুন এ ২৮ জনের আটজন রংপুরের। বাকিরা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।

বর্তমানে রংপুর বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তের হাজার ছাড়িয়েছে। এই বিভাগের আট জেলায় রোববার পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৯৪ জনে। এদের মধ্যে ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা মুক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪১০ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্র মতে, রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিবেচনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক দিনাজপুুর জেলায়। এ জেলায় শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮১৮ জন এবং মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ৯০ জনে। এর পরই রংপুর জেলায় ৩ হাজার ২৮১ জন শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের।

অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। ছবি: বার্তা২৪.কম 

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার বলেন, এখন শীত আসছে, করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। যতদিন হাতে হাতে করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবে না, ততোদিন মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এখন মাস্কই ভ্যাকসিনের কাজ করছে।

এদিকে গেল কয়েকদিন ধরে মাস্ক ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়াতে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে রংপুর জেলা প্রশাসন। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করাসহ সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া কঠোর ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করার পাশাপাশি হাট-বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা, রেলওয়ে স্টেশন, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড ও জনসমাগম হওয়ার স্থানগুলো চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণা।

প্রশাসেনর এতো কড়াকড়ি নির্দেশনা ও জেল-জরিমানার পর রংপুর নগরে তেমন পরিবর্তন নেই। বরং পুলিশ দেখলে মুখে মাস্ক, পুলিশ থেকে একটু দূরে গেলেই মাস্ক পাচ্ছে পকেট সাজ। আবার কেউ কেউ মুখে মাস্ক পরলেও তা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করছেন না। বরং নিজের আক্রান্ত হবার ঝুঁকির সাথে বাড়াচ্ছেন পরিবারের সদস্যেরও আক্রান্ত হবার ঝুঁকি। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছবি: বার্তা২৪.কম

সোমবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রংপুর জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এতে নেতৃত্ব দেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা। অভিযানের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কয়েক জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যারা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলাফেরা করছে তাদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আগামীতে আরও বেশি কঠোর হবে প্রশাসন এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি।

এদিকে রংপুরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন হাট-বাজার, গণপরিবহন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সবখানেই মানুষ ইচ্ছে মতো চলাফেরা করছে। কারো মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা নেই। তাই এখনই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার। নয়তো আবারও মৃত্যুর মিছিলের সাথে লম্বা হবে সংক্রমণের মিছিলও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর