তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা বাতিল নিয়ে সংসদে মৃদু বির্তক

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:01:02

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে সন্তুষ্ট করা বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করার জন্য এই রায়টি হয়েছিল। এটা সরকারকে খুশি করার জন্য কোনো রায় না।’ পরে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংসদে মৃদু বির্তক সৃষ্টি হয়। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বিষয়টি উত্থাপন করেন। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি বিল পাসের আগে বিষয়টি নিয়ে যুক্তি তুলে ধরেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সামুদ্রিক মৎস্য বিল-২০২০ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। বিলের দফায় সংশোধনী ও জনমত যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কথা তোলেন।

সামরিক শাসনামলে জারি করা সমস্ত অধ্যাদেশ বাতিল করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হারুনুর রশীদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের যে সমস্ত রায় দেওয়া হয়, সমস্ত রায় কি আমরা কার্যকর করি, মানি? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে অবজারবেশন দেওয়া হয়েছিল, যে রায় দেওয়া হয়েছিল সেগুলো কার্যকর করা হয়নি। সুতরাং রায় দেওয়া যায়... ২০১১ সালে সরকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই রায়টি প্রদান করা হয়েছিল। অর্থাৎ পঞ্চম এবং সপ্তম সংশোধনী বাতিল করলাম অথচ ওই সময় যে সমস্ত কর্মকাণ্ড আজ পর্যন্ত ওই আইনের দ্বারা চলমান রয়েছে সেগুলোকে কিভাবে বাতিল করব? ওই আইনের কার্যকারিতা কি প্রয়োজন নাই? আজকে ওই সময়ের সমস্ত আইনকে অবৈধ করে দিলেন, তাহলে ওই সময় যে সমস্ত আইন দ্বারা কার্যকর হয়েছে। আমি সামরিক আইনকে অবৈধ ঘোষণা করলাম কিন্তু ওই সময়ের সমস্ত কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করল। ওই সময় যে সমস্ত আইন দ্বারা কার্যকর সেগুলোর কি হবে?

জবাবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, কেয়ারটেকার গভমেন্ট অবজারবেশনকে আমরা মানি নাই কেন? এরকম একটা কথা বলতে চেয়েছেন। অবজারবেশনটা কতটুক ছিল? সংসদ চাইলে। তৎকালিন সময়ে সংসদ চাননি। অবজারবেশন কোনো ডিসিশন না, আর অবজারবেশনের অপশনটা পার্লামেন্টে দেওয়া হয়েছিল পার্লামেন্ট যেটাকে যথার্থ মনে করেছেন, পার্লামেন্ট সে বিষয়টি করেছেন। সরকারকে খুশি করার জন্য পঞ্চদশ এবং সপ্তদশ সংশোধনী হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান যেটাকে প্রায়ই আমরা রেফার করি। এই সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে অনুচ্ছেদ ১ থেকে শুরু করে শেষ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত কোথাও মার্শাল ল নামক কোনো আইন নাই এবং কেউ কাউকে অথরিটি দেয়নি চাকরিতে থাকা অবস্থায় আমি এসে দাঁড়িয়ে বলবো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দেশবাসী আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। আমাদের সংবিধান কি বলছে, যদি রাষ্ট্রপতি না থাকেন উপ রাষ্ট্রপতি আছেন, উপ রাষ্ট্রপতি যদি না থাকেন স্পিকার রয়েছেন। কে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের অথরিটি দিয়েছিল ক্ষমতা দখল করার? ইউনিফর্ম পরে আমি প্রার্থী আমাকে ভোট দেবেন না, হ্যাঁ বা না ভোট। কোনও কোনও জায়গায় নাকি ১০১ শতাংশ ভোট দেওয়া হয়েছিল। এই জাতীয় ত্রুটি নিয়ে যারা আসছেন তাদের লিগ্যাল কোনো স্ট্যান্ড না থাকার কারণেই সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছেন। এই রায় সরকারকে খুশি করার জন্য নয়, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করার জন্য রায়টি হয়েছিল।

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, যখন কেউ ক্ষমতায় থাকে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথেচ্ছা ক্ষমতা দিতে খুব ভালো লাগে। গৃহ তল্লাশি, বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, সেগুলোতো গুচ্ছ ক্ষমতা, পারলে বিনা বিচারের হত্যার ক্ষমতা, দেখা মাত্র গুলি করার ক্ষমতা এগুলো ক্ষমতা দিতে খুব আরাম লাগে। কিন্তু ক্ষমতা থেকে যখন চলে যায়, তখন বোঝা যায় যে এই ধরনের ক্ষমতার ফল কি হতে পারে।

তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টের ব্যাপারে কি ধারণা আমাদের সংবিধান দেয়? বিষয়টি সরকার কেন তড়িগড়ি করে একটা আপিল দায়ের করল মোবাইলে কোর্টের পক্ষে? যে স্থগিতাদেশ ‘স্টে অর্ডারটা’ গত তিন বছর ধরে ঝুলে আছে এটার শুনানি কেন করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র মোবাইল কোর্টটাকে প্রলম্বিত করার জন্য এবং নির্বাহী বিভাগের হাতে বিচার বিভাগের কিছু ক্ষমতা তুলে দেবার জন্য সরকার মামলাটির শুনানির ব্যাপারে উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর