ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলার এক স্কুল শিক্ষিকা।
রোববার (১৫ নভেম্বর) আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে উপজেলাজুড়ে। ভুক্তভোগী ওই নারী ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন পিবিআই।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই নারী হাজী আব্দুল কুদ্দুস স্কুল এন্ড কলেজের ভোকেশনাল শাখার সহকারী শিক্ষক। তিনি ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্কুলটিতে যোগদান করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। আশুগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনও একই এলাকায় ভাড়া থাকেন। এবং ভুক্তভোগী ওই নারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের অধীনে চাকরি করেন। ২০১৭ সালে ওই নারীর স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে আবুল হোসেনের কুদৃষ্টি পড়ে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে ওই নারীকে উপস্থাপিকা হিসেবে দায়িত্ব দেন। বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস উদযাপন ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ওই নারীকে উপস্থাপিকার দায়িত্ব দেন আবুল হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় আবুল হোসেন ওই নারীর কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময়ে আবুল হোসেন কুপ্রস্তাব দিয়ে ওই নারীকে উত্যক্ত করে আসছিল। ওই নারী চাকরির কথা চিন্তা করে সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে আসছিলেন। চলতি বছরের ৮ মে বিকালে ওই নারীকে আবুল হোসেন ফোন করে তার মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে দাওয়াত দেন। দাওয়াত পেয়ে ওই নারী সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবুল হোসেনের বাসায় যান। এসময় বাসায় গিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওই নারী হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে আবুল হোসেন ওই নারীকে একলা পেয়ে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এসময় তিনি ওই নারীর বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। ওই নারী বাঁচার জন্য চেষ্টা করলে আবুল হোসেন তার মুখ চেপে ধরেন। পরে ওই নারী বিভিন্ন আকুতি মিনতি করে তার হাত থেকে নিজেকে কোনো রকমে রক্ষা করে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে তিনি তার ছেলে ও তার স্বামীকে ঘটনা জানায়। এসব বিষয়ে ওই নারী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেদুল ইনলামকে জানালে তারা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকার পরামর্শ দেন। নিরূপায় হয়ে ওই নারী বিভিন্ন স্থানে জানালেও কোনো সমাধান না পাওয়ার কারণে তিনি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই নারীর ছেলে ও স্বামীকে সাক্ষী করা হয়েছে।
১৫ নভেম্বর রোববার সকালে মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করেছেন ওই নারী। বিচারক অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন।
ওই নারী মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কম-কে জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন ২০১৭ সাল থেকে তার পেছনে লেগেছেন। নানান কুপ্রস্তাব করলেও তিনি চাকরির কথা চিন্তা করে কাউকেই কিছু জানাননি। অবশেষে তার অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকায় এবং ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মামলাটি পেলে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেব। ভুক্তভোগী যেন ন্যায় বিচার পান সেজন্য আমরা তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত করব।