আমনে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:23:41

মেহেরপুর: মেহেরপুরে আমন ধান ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গাছের পাতা মুড়িয়ে পোকায় রস আহরণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান ক্ষেত। পোকা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ফলন বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি অফিস বলছে- আক্রমণ তীব্রতর নয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলাজুড়ে এবার আমন ধানের সমারোহ। প্রতিটি মাঠেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের আমন ধান। ক্ষেতের ধানগুলো এখন কাইচথোড় পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ।

ধর্মচাকী গ্রামের ধান চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে তিনি ক্ষেতে গিয়ে ধানের পাতা শুকানো অবস্থায় দেখতে পান। অনেক ধানের গোছায় পাতার মাঝামাঝি সাদা হয়ে গেছে। আক্রান্ত স্থল হালকা হওয়ায় ফেটে ছিদ্র হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো গোছের পাতা মাঝ থেকে ভাজ দেওয়া। আবার এক পাতার সঙ্গে আরেকটি পাতা লেগে রয়েছে। দুই পাতার সংযোগস্থলে মাকড়সার জালের মতো আঠালো কিছু দিয়ে আটকানো।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, পোকার জীবন চক্র চারটি স্তরে সম্পন্ন হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী মথ পাতার মধ্য শিরা বরাবর একটা করে ডিম পাড়ে এবং ৫-৭ দিনের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। কীড়াগুলো মোড়ানো পাতার মধ্যে জীবন কাটায়। পুত্তলির জীবনকাল ৭ দিন এবং পূর্ণবয়স্ক মথ ৭-১০ দিন বেঁচে থাকে।

পাতামোড়ানো পোকার ক্ষতির বিষয়ে তিনি জানান, পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খায়। খুব বেশি ক্ষতি হলে পাতা পোড়ার মতো মনে হয়। পোকা প্রতিটি গাছের ডিগপাতার অর্ধেক এবং এর পাশের দুটি পাতা খেয়ে ফেললে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ফুল ফোটার আগে এই পোকার আক্রমণে যে ক্ষতি হয় তা গাছ কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে ফুল ফোটার পর পাতায় এই পোকা আক্রমণ করলে ফলন কমে যায়।

মেহেরপুর জেলায় কোনো মাঠেই ব্যাপকভাবে এ পোকার আক্রমণ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পার্চিং করে পাখি বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে অনুমোদিত মাত্রার কীটনাশক প্রয়োগের জন্যও চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

শিশিরপাড়া গ্রামের চাষি ফজলুর রহমান বলেন, ‘পোকার আক্রমণের পর ক্ষেতে ডাল পুঁতেছি এবং কীটনাশক স্প্রে করেছি। এখন পোকার আক্রমণ আর দেখা যাচ্ছে না।’

এ পোকার আক্রমণ থেকে প্রতিকারের বিষয়ে ড. আখতারুজ্জান জানান, আলোর ফাঁদ দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর যশোর অঞ্চলের প্রতিটি ব্লকে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হবে। তবে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে এই পোকার মথ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শতকরা ২৫ ভাগ বা তার বেশি পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলেই কেবল রাসায়নিক দমন ব্যবস্থাপনা হিসেবে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তার আগে নয়। কেননা ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকার চেয়ে উপকারী পোকাই বেশি থাকে। তাই জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার দিকে অবশ্যই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর