তাজরীনের আগুনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মোহছেনার জীবন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-21 09:14:27

তাজরীনের ভয়াবহ আগুনের ছোবলে স্বজনের দগ্ধ দেহ। কেউ বেঁচে ফিরলেও, অনেকই পরাজিত হয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন বড্ড অসময়ে। শরীরের ক্ষত আর মসৃণ চামড়ার টান অজান্তেই মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াল আগুনের ছোবল। কারও আবার প্রিয় স্বজন ও পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে মনের ক্ষোভ নিয়েই চলছে নিরুপায় জীবন। নিতে হয়েছে জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত।

তাজরীন ট্রাজেডি অতিবাহিত করেছে দীর্ঘ ৮ বছর। ২০১২ সালের এই দিনটি আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। এদিন অগ্নিদগ্ধ হয়ে কয়লা হয়েছেন ১০১ জন শ্রমিক। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ১২ জন। আহত হন প্রায় ৩ শতাধিক শ্রমিক। আহত অত্যন্ত কষ্টে দিন যাপন করছেন। তাদের সন্তানরা পরিবারের কষ্ট দেখে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সেই হাল ধরেছে সংসারের। আহত শ্রমিকের বোঝা বইতে না পেরে ফেলে চলে গেছে স্বামীও। এক সাথে স্বামী ও কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে যেন বেঁচে আছেন মরার মতই। মোহছেনাও ঠিক এমনি একজন আহত শ্রমিক। যিনি আহত হয়ে হারিয়ে ফেলেছেন জীবনের সুখের সময়।

ছোট বেলা থেকেই অভাব অনটনের সংসারে বড় হন তাজরীনের আহত শ্রমিক মোহছেনা। অভাবের কারনে অল্প বয়সেই চাকরির জন্য ২০০৭ সালে রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আসেন আশুলিয়ার এই নিশ্চিন্তপুরে। এখানেই প্রথমে একটি কারখানায় হেলপার হিসাবে চাকরি নেন মোহছেনা। পরে বয়স কম হওয়ায় সেখানে চাকরি করতে পারেননি তিনি। আরেকটি কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করার পরে দিলশাদ নামের এক পোশাক শ্রমিককে বিয়ে করেন তিনি। পরে চাকরি নেন তাজরীন ফ্যাশনের ৬তলায়।

জীবন সংগ্রামে এক সময় সুখের দেখা পাবেন ভেবেই এই কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। তবে তার জীবনের আকাশ আবারও তাজরীনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সুখ নামের ছোট্ট শব্দটি যেন তার জীবনের খাতায় লেখা ছিল কোন দিনই। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরে তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে ৯তলা ভবনের ছয় তলা থেকে বাঁশ দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে আহত হন মোহছেনা। সন্তান সম্ভাবা এই নারীর পেটেই জীবন দিতে হয় তার সন্তানকে। একই সাথে হারিয়ে ফেলেন সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা। বিভিন্ন ধরনের রোগেও চেপে ধরেছে তাকে। এ যেন অসহায়ত্বের নিদারুন নির্মমতা।

মোহছেনা বার্তা২৪.কম’কে বলেন, তাজরীনে আহত হওয়ার পরেই আমাকে ফেলে রেখে গেছে আমার স্বামী দিলশাদ। কাজ করার ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা হারানোয় তালাক দিয়েছে স্বামী। কাজ করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে এই তাজরীন, সাথে কেড়ে নিয়েছে আমার ছোট্ট সোনার সংসার। এই সংসারে একটুখানি সুখের আশায় পরিশ্রম করেছি সামর্থের চেয়ে বেশি। তবুও আমার সব কিছু কেড়ে নিলো তাজরীন। মানুষের জীবনের শেষ অবলম্বন সন্তান। তাকেও কেড়ে নিয়ে একেবারে কেড়ে নিয়েছে মা হওয়ার ক্ষমতা। আমি এখন বিভিন্ন রোগে ভুগছি। হার্ডের সমস্যা বেড়েছে, ইনফেকশন হয়েছে রক্তে ও প্রস্রাবে, সাথে ডায়াবেটিস তো আছেই। এভাবে কি বাঁচা যায়? আমাকে বেতন ছাড়া কোন অনুদানই দেওয়া হয় নি। এখন সহযোগিতা ছাড়া আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন বুদ্ধি নেই। বিধবা বোন চাকরি করে কোনমতে আমার ভরনপোষণ করছেন। তিনি যখন থাকবে না তখন আমি কোথায় যাবো? আমি অনুদান ও সহায়তা বঞ্চিত শ্রমিক। আমি বাঁচতে চাই! আমি সহযোগিতা চাই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার হোসেন বলেন, আহত শ্রমিকরা নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। তাজরীনের আহত শ্রমিকদের খুঁজে বের করে তাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওযার আহ্বান জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর