এখনো সবজি বিক্রি করতে হয় সিরাজুলকে

চট্টগ্রাম, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:32:37

লক্ষ্মীপুর: ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা সিরাজুল হক। প্রায় ৭২ বছর বয়সেও ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। ঢাকা, চট্টগ্রাম শেষে এখন নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে সবজি বিক্রি করছেন। প্রায় ২১ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যেখানে তার বিশ্রামের কথা ছিল সেখানে এখনো তাকে সবজি বিক্রি করতে হয়।

সংসারের হাল ধরার মতো তার তেমন কেউ নেই। সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অসুস্থ হলে সবজি নিয়ে আর বের হতে পারেন না। উপার্জনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। একটি ছেলে সন্তানও নেই যে সংসারের হাল ধরবে। ৪ মেয়ের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে তার সংসার চলছে।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও পিয়ারপুর বাজার থেকে প্রতিদিন তিনি সবজিগুলো কিনে থাকেন। এরপর দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জেলা শহরের কলেজ রোড থেকে তমিজ মার্কেট এলাকায় ভ্যানে করে এসব সবজি বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিনই দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তিনি সবজি বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকেন।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের চক বাজার এলাকায় সিরাজুল হকের সঙ্গে দেখা হয় বার্তা২৪.কমের। তখন তার ভ্যানে লাউ, কুমড়া, বেগুন, বরবটি, শসা, কাঁচা মরিচের পসরা সাজানো ছিল। এ সময় সবজি বিক্রি নিয়ে বেশকিছু সময় তার সঙ্গে কথা হয়। সবজি বিক্রি করে তার ভালোই লাভ হয়। তবে তা সঞ্চয় করার মতো নয়। প্রতিদিনের লাভের টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে।

জানা গেছে, সিরাজুল হক সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের পূর্ব টুমচর গ্রামের মৃত এবায়েদ উল্যার ছেলে। অভাবের সংসারে পড়ালেখা করা হয়নি তার। খুব কম বয়সে ঢাকা চলে যান। সেখানে গার্মেন্ট ও নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। পরে এসব কাজ ছেড়ে ঢাকাতেই তিনি সবজি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তবে স্থায়ী নয়, ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকান ছিল। এরপর চট্টগ্রামেও তিনি একই কাজ করেন। ব্যবসাটি সেখানে খুব ভালো চলত। কিন্তু কোনো সঞ্চয় করতে পারেননি। সবশেষ নিজের আবাসস্থল লক্ষ্মীপুরে এসেও জীবিকার তাগিদে সেই সবজিই বিক্রি করছেন তিনি।

সিরাজুল হক জানান, প্রায় ২১ বছর আগে ঢাকার মিরপুরে তিনি ভ্রাম্যমাণ ভাবে সবজি বিক্রি শুরু করেন। মিরপুরের ওলিতে গলিতে তিনি প্রায় ৭ বছর সবজি বিক্রি করেছেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে হাটহাজারি, নাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮ বছর সবজি বিক্রি করেন। ধীরে ধীরে বয়স বেড়ে যাওয়ায় ৬ বছর আগে ফিরে আসেন লক্ষ্মীপুরে। এলাকায় ফিরে আসার পর একটি ভ্যান কিনে ফের সবজির ব্যবসা শুরু করেন। তাও প্রায় ৬ বছর হয়ে গেল। ৭২ বছর বয়সেও তিনি থেমে যাননি। সংসারের ঘানি টানতে এখনো প্রতিদিন সবজি নিয়ে রাস্তায় বের হন সিরাজুল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর