মাস্ক ব্যবহারের বালাই নেই, তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2023-08-27 18:27:40

টাঙ্গাইলে প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা গেলেও বর্তমানে সেটা দেখা যাচ্ছে না। সরকার বাধ্যতামূলক মুখে মাস্ক ব্যবহারে নির্দেশনা দিলেও মাঠ পর্যায়ে এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। জেলার অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না।

ব্যস্ততম টাঙ্গাইল পৌর শহরের ক্যাপসুল মার্কেটের পিছনের দোকানপাটগুলোতে মানুষের ভীর লেগেই থাকে। সেখানে অনেকের মুখে মাস্ক নেই। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের হাট-বাজারগুলোতে একই চিত্র। শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে তাদের মধ্যে নেই তেমন কোন সচেতনতা। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মুখে মাস্ক না থাকায় অনেককে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, কেউ ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছেন। আবার কেউ বাজার এসে কিনবেন, কেউবা মুখের থুতনিতে লাগিয়ে রেখেছেন আবার কেউ পকেটে রেখেছেন কোন ঝামেলা এড়াতে।

ভূঞাপুর পৌর এলাকার ভ্যান চালক শুকুর আলী বলেন, গরীবের করোনা আইবো না। এরআগেওতো করোনা আইছিল তখনতো হয় নাই আমগো। এখনও হইবো না ইনশাআল্লাহ।

এদিকে টাঙ্গাইলে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ না কেউ। তারপরও মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহ দেখা যায়নি রাস্তায় চলাচলরত বেশির ভাগ মানুষের। শারীরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন দোকান, চা স্টলে যে লোক সমাগম হচ্ছে-তাদের মধ্যে নেই করোনা সচেতনতা।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪’শ ৩৩জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৯ জন। বাড়িতে ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৭৬ জন। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ২’শ ৫৭ জন। শীতে করোনা ভাইরাস বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা। একই আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে মাস্ক পরিধানসহ আগাম সতর্ক বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন।

বাজারে নেই কারো মুখে মাস্ক। ছবি: বার্তা২৪.কম

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ক্যাপসুল মার্কেট ও মাহমুদুর হাসান মার্কেটের রাস্তাগুলোতে জনগণের ভিড়ে। সামাজিক দূরত্ব তাদের মধ্যে একদম নেই। একজন আরেকজনের সাথে প্রায় লাগালাগি হয়ে চলাচল করছেন। তাদের বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়া। আবার কারো মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলে আছে মুখের নিচে থুতনিতে।

টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় বাজার পার্ক বাজার। সেখানেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অধিকাংশই পরছেন না মাস্ক। কাঁচা বাজারে দেখা যায়, কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও নাক ও মুখ না ঢেকে নিচে নামিয়ে রেখেছেন। আর অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মুখে একদমই মাস্ক নেই।

শহরের অনেক জায়গায় মাস্ক বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের ঠিকমত মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। নিরালা মোড়ের মাস্ক ব্যবসায়ী মিয়া চান জানান, মাস্কতো করোনার জন্য পরে না। ধুলাবালির জন্য পরে। এজন্য আমি মাস্ক মুখের নিচে রাখছি।

রহিমা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রথম দিকে প্রতিটি মাস্ক বিক্রি করেছি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত এখন সেটা প্রতি পিস ৫ টাকা। তাও মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে না। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সারা দেশে।

ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, মাস্ক ব্যবহারে জনসচেতনতার পাশাপাশি মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে প্রয়োজনবোধে মোবাইল কোর্ট বসাতে হবে। এতে মাস্ক ব্যবহারের চাহিদা বাড়বে।

টাঙ্গাইলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজিব পাল চৌধুরী বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা সচেতনতায় অবশ্যই সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাদের ঠান্ডা বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ রয়েছে তাদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করা বেশি প্রয়োজন। এতে করোনার পাশাপাশি ধুলোবালির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, শীতে করোনার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে অবশ্যই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। শহরের অনেক লোকই মাস্ক ব্যবহার করছে না।

তিনি আরো জানান, সিভিল সার্জন অফিস ৪টি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সেগুলো হলো ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরিধান করতেই হবে, কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জ্বর ও ঠান্ডা কাশি হলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর