মধ্যরাতের আগুনে পুড়ে ছাই বস্তিবাসীর জমানো সম্বলটুকুও

, জাতীয়

সাদিয়া কানিজ লিজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 20:02:32

‘দিন আনি, দিন খাই’এই হচ্ছে তাদের অবস্থা। কেউ করেন গৃহকর্মীর কাজ, কেউ আবার ঠিকা বা ভ্যান-রিকশা শ্রমিক। সম্বল বলতে বিপদের জন্য ঘরে জমানো অল্প স্বল্প টাকা, রান্নার চাল-ডাল, আর ঘরের জিনিসপত্র!

মহাখালী সাততলা বস্তিবাসীর সেই সম্বলটুকু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে সোমবার মধ্যরাতের লাগা আগুনে। বস্তির ১০০ টিরও বেশি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান পুড়েছে ৩৫টি। সেই সঙ্গে পুড়েছে শেষ সম্বলটুকু। আর তাতেই মাথায় হাত পড়েছে বস্তিবাসীর।

খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই পাওয়া পোড়া বস্তিবাসীর চোখ এখন ছাইয়ের স্তুপে

দরিদ্র মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতেই ছিল ওই বস্তির ঝুপড়ি ঘরগুলো। খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই পাওয়া পোড়া বস্তিবাসীর চোখ এখন ছাইয়ের স্তুপে! ধ্বংসস্তুপে হাতড়িয়ে কুড়িয়ে নিচ্ছেন বেছে যাওয়া ন্যূনতম সম্বলটুকু।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, নির্ঘুম রাত কাটানো, বিধ্বস্ত বস্তিবাসীর কেউ কেউ এখন ক্ষুধা পেটে অপেক্ষা করছেন ত্রাণের খাবারের। স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীরা খাবারের ব্যবস্থা করলেও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ তারা সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন খাবার পাননি।

বস্তির ১০০ টিরও বেশি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান পুড়েছে ৩৫টি। সেই সঙ্গে পুড়েছে শেষ সম্বলটুকু

বস্তির সাথেই মো. সোহাগের দুটি জুতার দোকান ছিল তা থেকে এখন পোড়া ছাই। শুধু সোহাগ নয় তার মত আরো ৩০-৩৫ জনের দোকান পুড়েছে।

কান্না জাড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি আগুন লাগার দশ-পনের মিনিট আগেই দোকান বন্ধ করে বাসায় গেছি এরমধ্যেই খবর পাই বস্তিতে আগুন লাগছে। ছুটে এসে তাকায়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তখন আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিল। দুইটা জুতার দোকান মিলায়া আমার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কেমনে পূরণ করমু এখন কিছুই জানিনা।

ধ্বংসস্তুপে হাতড়িয়ে কুড়িয়ে নিচ্ছেন বেছে যাওয়া ন্যূনতম সম্বলটুকু

পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে মনমরা হয়ে বসে আছেন বস্তির বাসিন্দা রাহিমা। বাসাবাড়িতে কাজ করে অল্প অল্প করে ১২/১৪ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন এই নারী। বললেন, আগুন লাগার কথা শুইনা দৌড়াইয়া বাইর হইয়া গেছি। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই লইয়া বাইর হইতে পারিনি। ঘরে সবই আছিল। বাসা বাড়িতে কাম কইড়া ১২-১৪ হাজার টাকা জমাই ছিলাম আগুনে তাও পুড়ে শ্যাষ।

পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে মনমরা হয়ে বসে আছেন এক নারী

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসির বলেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, যাদের ঘর বাড়ি বা দোকান পুড়ে গেছে তারা কেউ না খেয়ে থাকবে না। আমরা একটি তালিকা করছি এখনো তা পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি তালিকা শেষ হলে আমরা বুঝতে পারবো আমরা কতটুকু কি করতে পারবো তাদের জন্য।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক একটি তালিকা আমরা পেয়েছি অগ্নিকাণ্ডে ঘর আর দোকানসহ পুড়েছে অন্তত ১৪০-১৪৫ টি। প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেছি এবং সাময়িকভাবে থাকার জন্য কিছু ব্যবস্থা করছি।

বিধ্বস্ত বস্তিবাসীর কেউ কেউ এখন ক্ষুধা পেটে অপেক্ষা করছেন ত্রাণের খাবারের

এর আগে ২৪ নভেম্বর রাত পৌনে ১২ টার দিকে মহাখালী সাততলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ১২ টি ইউনিটের ২০০ জন কর্মী। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ১২ টা ৫৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম। ১২ ইউনিটের সর্বমোট ২০০ ফায়ার কর্মী ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা গ্যাস লিকেজ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর