করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: গণপরিবহনে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, বাড়াচ্ছে ঝুঁকি

, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 04:15:29

সারাবিশ্বে শুরু হয়েছে করোনা মহামারি দ্বিতীয় ঢেউ। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন শীতকালে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে। বাংলাদেশও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে। তবে সরকার ও বিআরটি’র নির্দেশনা পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে গণপরিবহনে।

শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। গণপরিবহনসহ সবখানে মাস্ক পরতে হবে। মানতে হবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি। তবে সরকারের এই কঠোরতাকে বৃদ্ধাঙ্গালি দেখিয়েছে রাজধানীর গণপরিবহনগুলো। অনেক যাত্রী যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছেন না, তেমনি পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যেও দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা।

এদিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। বেশিরভাগ যাত্রী পরছেন না মাস্ক। তাছাড়া গাড়ির চালক সুপারভাইজার তারাও মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন। গণপরিবহনের নির্ধারিত সিটের অধিক দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানা হচ্ছে না সে নির্দেশনা। বেশিরভাগ গণপরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। আর এই ব্যাপারে যাত্রীদেরও কোন মাথাব্যথা নেয়।

করোনা শুরুর দিকে গণপরিবহনে সুপারভাইজার যাত্রীদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে দেখা গেলেও এখন আর তা কেউ মানছেন না। মানুষ কিছুটা সতর্ক হলেও এখন মাস্ক ব্যাবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গণপরিবহনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন,'দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ এটা আসলে রাজধানীর বাহিরে দূরপাল্লার কোনো বাসে হচ্ছে না। রাজধানীর ভিতরেই গুটিকয়েক বাসে এমনটি হচ্ছে। সেটাও অফিস টাইমের দিকে হচ্ছে। তবে আমরা দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করি। আমরা বিআরটিএকে বলেছি এই ধরনের কাজ কোন গণপরিবহন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। বিআরটিএ এসব পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলাও দিচ্ছে'।

বাসে ওঠা যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই

তিনি আরও বলেন, 'সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের পরিবহন মালিকদের বলা আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলানোর জন্য। একই সাথে যাত্রীদের অনুরোধ করবো বাসে উঠবার সময় নিজ দায়িত্বে মাস্ক ব্যবহার করবেন।নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের কাছে তাই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানে চলুন'।

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেলে চলাচলের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে গণপরিবহন চালাতে হবে। তাদের নির্দেশনাগুলো হলো- গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার/ কন্ডাক্টার, হেল্পার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণের মাস্ক পরিধান/ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান পানি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গণপরিবহন সমূহ জ্বালানি সংগ্রহ ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পথের মাঝখানে কোন যাত্রাবিরতি করতে পারবে না এবং মধ্যবর্তী স্থানে যাত্রী ওঠানোর জন্য থামানো যাবে না। যাত্রার শুরু এবং শেষে যানবাহন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও যানবাহনের মালিকগণকে যাত্রীগণের হাতব্যাগ মালপত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। বাসে ওঠার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতে মাঠে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রায় দীর্ঘ নয় মাস অতিক্রম করেছে এই করোনা মহামারি এখন কিছু মানুষ সচেতন হয়েছে। তবে তার পরেও যারা সচেতন হচ্ছেন না। তাদেরকে জরিমানার আওতায় এনে মাস্ক ব্যবহারের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর