কেডিএস গ্রুপের চাকরি ছাড়ায় ২৬ মামলায় দিশেহারা পরিবার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:01:12

একের পর এক মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কেডিএস গ্রুপের মালিকানাধীন কেওয়াই স্টিল মিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খান ও তার পরিবার। তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ২৬টি মামলা হয়েছে অভিযোগ পরিবারের। এসব মামলায় মুনির হোসেন ১১ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। শুধু তিনি নন, মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তার স্ত্রী, বাবা ও ছোট ভাইকেও।

মুনিরের স্বজনদের দাবি, চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করায় কেডিএস গ্রুপ মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছেন। গত এক বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে ২৬টি মামলা দায়ের করেছেন তারা। অথচ চাকরিতে থাকাকালীন সামান্য অভিযোগও ওঠেনি মুনিরের বিরুদ্ধে। বরং পুরস্কার হিসেবে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন খান। অসহায় এ পিতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় হয়রানিমূলক মামলা থেকে ছেলের রেহা্ইয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদনও করেছেন।

কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান

মুনির হোসেন খান বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক। আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা শেষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। অল্প সময়ে কোম্পানির উন্নতির ফলে মুনিরকে নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পেইড ডিরেক্টর করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৮ সালে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ছোট ছেলে ইয়াসিন রহমানের সঙ্গে কারাগারে এক বিজনেস মিটিং-এ মারধরের শিকার হন মনির হোসেন খান। এরপর এই ঘটনা বড় ছেলে সেলিম রহমানকে ই-মেইল করে জানান তিনি। পরে কোন উত্তর না পেয়ে মনির পদত্যাগ করেন। ১১ মাস বেকার থাকার পর অ্যাপোল স্টিল কোম্পানিতে পরামর্শের চাকরি নেন। এরপর থেকে মনির হোসেন খানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ৫টিসহ ঢাকার গুলশান থানা ও আদালতে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬টি মামলা হয়েছে।

মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, কেওয়াই স্টিলের টাকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন মুনির। কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা বিল ও পেমেন্ট ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ছোট ছেলে ইয়াসিন রহমান

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত হারবার মাস্টার এই বাবা বলেন, দীর্ঘদিন তাঁর ছেলে কেডিএস গ্রুপে চাকরি করেছেন। প্রতিবছর গ্রুপটি অডিট করে থাকে। টাকা আত্মসাৎ করে থাকলে সেই সময় কেন তাঁর ছেলেকে ধরা হয়নি। এছাড়া সবগুলো মামলার অভিযোগ প্রায় একই ধরনের। শুধু সময় ও অর্থের পরিমাণ ভিন্ন। মুনিরের বাবা, ছোট ভাই ও স্ত্রীর নামেও মামলা করা হয়েছে। মুনির প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। অভিযোগ যদি সত্য হতো তাহলে তারা এত মামলা না করে সব অভিযোগ একই মামলায় দিতে পারত।

মোয়াজ্জেম হোসেন খান দাবি করেন, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ইয়াছিন রহমানের সঙ্গে সভায় মারধরের ঘটনার জেরেও তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে।

১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামে জিবরান তায়েবি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকায় ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন হাইকোর্ট। এখনো ইয়াসিন কারাগারেই আছেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন খান

মামলা দিয়ে হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেডিএস গ্রুপের আইন উপদেষ্টা আইনজীবী আহসানুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুনির হোসেন খান কেডিএস গ্রুপ থেকে পণ্য আমদানিসহ নানাভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই সময় মনির কোনো অডিট করতে দিতেন না। ব্যাংকসহ নানা জায়গায় অর্থ আত্মসাতের কাগজপত্র যখনই পাওয়া যাচ্ছে, তখনই মামলা করা হচ্ছে। উপাদান না থাকলে মামলা হতো না।

কারাগারে ইয়াসমিন রহমানের বৈঠকের বিষয়টিকে তিনি মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করেছেন।

এদিকে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, আমেরিকাতে এমবিএ করে, ব্যাংক অব আমেরিকাতে এসভিপি-এর চাকরি ছেড়ে আমেরিকার পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও আমার ছেলের দেশের টানের ফিরে আসার যদি এই পরিণতি হয় তবে তা খুবই দুঃথজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আপামর জনসাধারণ ও আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল; আপনি সুবিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমি ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ অসহায় পিতা। আর্থিক মানসিক, মানবিক ও শারীরিকভাবে বড়ই ক্লান্তি নিরূপায়। আদালত থেকে আদালতে ঘুরে ঘুরে আমি করোনা আক্রান্ত হয়েছি। এখন এই ৭৭ বছর বয়সে আমি জানি না আমার কি হবে? এই অবিচার অত্যাহার জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনার সদায় হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর