পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাস উৎসব

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-28 00:51:28

সুন্দরবনের দুবলার চরে জাগ‌তিক জগতের পাপ মোচনের আশায় পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব। এ বছর রাস উৎসবে প্রায় ১৫ হাজার পূণ্যার্থীর আগমন ঘট‌ে।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) সুন্দরবনের দুবলার চরে ভোর ৬টায় সূর্য ওঠার আগেই পুণ্যার্থীরা সাগরের লোনা জলে জাগ‌তিক জগতের পাপ মোচনের আশায় স্নান করেন। পুণ্যস্নান শেষ হয় সকাল ৭টায়। স্নানের পূর্বে পূণ্যার্থীরা সাগর পাড়ে মনের আশার পূরণ ও পুণ্য লাভের আশায় প্রার্থনা করেন।

এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা । সোমবার ভোরে স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা সকালেই সকলের গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন।

পাপ মোচনের আশায় পুণ্যস্নান

রাস মেলার আয়োজকরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব বা মেলা হয়নি। তবে আনুষ্ঠা‌নিকতার কম‌তি ছিলনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। এবছর শুধুমাত্র সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের মানুষ অর্থাৎ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দুবলার চরে যাবার অনুম‌তি দেওয়া হয়নি। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। করোনা প‌রি‌স্থি‌তির কারণে পূণ্যর্থীদের কেউ কেউ মুখে মাস্ক ‍ও স‌্যা‌নিটাইজার ব্যবহার করেছেন। ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা ও ৩০ নভেম্বর সকালে দুবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হলো। স্বাভা‌বিক সময়ে রাস মেলায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষের আগমন হলেও এবার মেলা বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছে রাস উৎসবে। এর আগেও ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে কোনো মেলা বা উৎসব হয়নি।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে শুক্লপক্ষের ভরা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিনদিন ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ার সব থেকে বড় সমুদ্র মেলা। রাস মেলায় হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা উৎসব মুখর হয়ে ওঠে।

পুণ্য লাভের আশায় প্রার্থনা

হিন্দু ধর্মালম্বীরা পূর্ণিমার সাগরের জোয়ারে নোনা জলে স্নানের মধ্য দিয়ে পাপমোচন হয়ে মনস্কামনা পূর্ণ হবে, এ বিশ্বাসে রাসমেলায় যোগ দিলেও সময়ের ব্যবধানে এখন নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা সমবেত হয় এখানে। মেলা উপভোগ করতে অসংখ্য বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে।

সুন্দরবন বঙ্গোপসাগরের কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে উঠা দুবলার চর দ্বীপের রাস মেলা সাগর কেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় উৎসব। মেলার ইতিহাস মতে, ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরিভজন নামে এক সাধকের হাত ধরেই এ মেলার শুরু। সেই থেকে প্রতিবছর কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পূর্ণিমা তিথিতে শুক্লা পক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পাপমোচন ও পার্থিব জীবনের কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষে গঙ্গা স্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করে আসছে। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সনাতনীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম-বর্ণের দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও মন কাড়তে সক্ষম হয়েছে উৎসবটি। জেলে ও বনজীবীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও সুন্দরবনের দরবেশ গাজী-কালুর স্মরণে মানত দিতে যোগ দিয়ে থাকেন উৎসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর