কাওসারের উদ্যোগে প্রতি বছর রোপণ হচ্ছে এক লাখ গাছের চারা

, জাতীয়

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-29 15:49:06

কাওসার আলম সোহেল। তার স্বপ্ন বিস্তৃত সবুজ বাংলা গড়ার। এজন্য প্রতিবছর দেশজুড়ে রোপণ করে চলেছেন এক লাখ গাছের চারা। পাশাপাশি মাদক, বাল্যবিবাহ ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা নিয়ে বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই তরুণ। সামাজিক অবক্ষয় রোধে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে অভিরাম ছুটে চলা তার।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের ব্যানারে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর এক লাখ গাছের চারা রোপণ করছেন কাওসার আলম। কাওসার ওই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। করোনাকালের মধ্যেই এ বছরের ৭ জুলাই থেকে শুরু হয় তার বৃক্ষরোপণ অভিযান। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের ৫৫টি জেলায় বিনামূল্যে ৯০ হাজার ৩০০টি গাছের চারা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও শিক্ষার্থীদের গাছ দিচ্ছেন কাওসার। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ৬৪ জেলা ঘুরে সংখ্যাটা এক লাখ হলেই থামবে তার এবারের যাত্রা।

জানা যায়, কাওসার জেলার দাউদকান্দি উপজেলার পশ্চিম নোয়াদ্দা গ্রামের মো.গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তার বাবা আগে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

কাওসার আলম জানান, ২০১৭ সাল থেকে সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে এক লাখ গাছের চারা বিতরণ করে আসছেন তিনি। মূলত শিক্ষার্থীদের হাতেই চারাগুলো তুলে দেওয়া হয়। চারা হাতে নিয়ে তাদের ইভটিজিং, মাদক, আর ধর্ষণের বিরুদ্ধে শপথ করানো হয়। একইসঙ্গে মাদক, বাল্য বিবাহ ও ধর্ষণকে প্রতীকী লাল কার্ড দেখিয়ে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া বৃক্ষরোপণ আর দেশপ্রেমের মতো ইতিবাচক বিষয়গুলোকে সবুজ কার্ড দেখিয়ে স্বাগত জানান তারা।

লালল-সবুজের যাত্রা নিয়ে কাওসার আলম বলেন, স্কুল জীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম মানুষের জন্য কিছু করার। বাবার চাকরির সুবাদে সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে শিাবৃত্তি পেতাম আমি এবং ছোট বোন ফারজানা আক্তার। অনেক বছর সেই টাকা তোলা হয়নি। জমানো টাকা তোলার পর মনের সুপ্ত ইচ্ছেটা জেগে উঠল। তখন চিন্তা করলাম শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক একটি সংগঠন দাঁড় করানোর। এরপর ছোট বোন ফারজানাকে জানালে সেও সহযোগিতার হাত বাড়ায়। কখন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করার মাধ্যমেই যাত্রা শুরু হয় লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের। সেই ২০১১ সালে নিজ গ্রাম থেকেই স্বপ্নযাত্রা শুরু। এরপর একে একে থানা, জেলা পেরিয়ে এখন দেশজুড়ে লাল সবুজের স্বপ্নের চাষ হয় প্রতিনিয়ত।

গাছের চারা হাতে মাদক, বাল্যবিবাহ ও ধর্ষণ লাল কার্ড দেখাচ্ছেন কাওসার আলম সোহেলসহ শিক্ষার্থীরা।

কাওসার আলম বলেন, আমি বাবার কাছ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আর সমাজের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তিল তিল করে জমানো টাকা দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘের কমিটি হয়েছে। সারাদেশে এই সংঘের সদস্যসংখ্যা এখন প্রায় তিন হাজার। যাদের সবাই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। এই শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে ১০ টাকা করে সংঘের তহবিলে জমা দেন। সেই টাকায় বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে চলে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে বাল্যবিবাহ, মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছরই নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন কাওসার। ২০১২ সাল থেকে যুক্ত হয় সবুজ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে লাল সবুজের প্রচেষ্টা, সবুজ করবো দেশটা শ্লোগানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। প্রথমত স্কুল, কলেজে গাছের চারা রোপণ করতেন তারা। এখন চারা তুলে দেন শিক্ষার্থীদের হাতে। শিক্ষার্থীরা সেই চারা হাতে নিয়ে মাদক ও ধর্ষণমুক্ত বাংলা গড়ার শপথ নেন। ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনের মাধ্যমে মাদক, বাল্যবিবাহ ও ধর্ষণবিরোধী সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেন কাওসার। চলতি বছর দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশব্যাপী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ত্রাণ বিতরণ এবং মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সচেতনতার র্বাতা ছড়ান তারা। তারা গত তিন বছরে তিন লাখ গাছের চারা দেন শিক্ষার্থীদের ।

কাওসার আলম বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো ভালো মানুষ গড়ে তোলা। আমরা প্রতিজন সদস্য যদি অন্তত ৫ জন করে মানুষকে মাদক ও বাল্যবিবাহ থেকে দূরে রাখতে পারি, তাহলে বছরে ১৫ হাজার মানুষকে ভালো রাখতে পারবো। আর তারা নিজকে পরিবর্তন করে অন্যকে ভালো রাখবে। এভাবেই সত্যিকারের সেনার বাংলা গড়ে ওঠবে। এর মাধ্যমে আমাদের চেষ্টাও সার্থক হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর