আত্মহত্যা করেছে তাসফিয়া, মানতে নারাজ পরিবার

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:00:53

স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যা মামলায় আদালতে দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সন্তুষ্ঠু নয় তাসফিয়ার পরিবার। পুলিশ প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বললেও তা মানতে নারাজ তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পরিবারের দাবি, নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাসফিয়া। দায় এড়ানোর জন্য আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে পুলিশ।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে তাসফিয়ার বাবা এসব কথা জানান।

জানা গেছে, রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চীফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক ওসমান গণির আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, প্রতিবেদনে তাসফিয়ার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘রোববার সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন সরকার করা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট ও স্বাক্ষীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।’

এদিকে, তাসফিয়ার বাবা-মা’র দাবি, তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে কিন্তু পুলিশ বলছে সে আত্মহত্যা করেছে।

এ বিষয়ে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বার্তা২৪কে বলেন, নগরীর জিইসি মোড় থেকে তাসফিয়া পতেঙ্গা সৈকতে গেল কিভাবে তার কোন বিবরণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে। এছাড়া তাসফিয়ার হাতে একটি আংটি ও মোবাইল ফোন ছিল। সেটার হদিস নেই।

এ ব্যাপারে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম বলেন, তাসফিয়া যদি পানিতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে তাহলে যারা পানিতে ঝাপ দিতে দেখেছে তারা তাকে উদ্ধার করেনি কেন? তদন্ত প্রতিবেদনে যে সব স্বাক্ষীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাসফিয়ার মৃত্যুর সময় তারা সেখানে ছিলই না।

নাঈমা খানম বলেন, আমার মেয়েকে আদনান মির্জাই কৌশলে হত্যা করেছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব জানা যাবে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই। তাসফিয়ার শরীরে বিভিন্ন আঘাত রয়েছে। এগুলোই প্রমাণ করে এটি হত্যাকাণ্ড।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন সরকার বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। তার শরীরে বিষক্রিয়ারও কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।  ধর্ষণের কোন প্রমাণও মেলেনি। 

এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর মামলায় গ্রেফতার আসামি ও স্বাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হই তাসফিয়াকে হত্যা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অধিকতর তদন্ত শেষে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তাসফিয়া পানি লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’

গত ২ মে সকালে নগরীর পতঙ্গোর ১৮ নম্বর ব্রিজঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে তাসফিয়ার লাশ দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাসফিয়া আমিনের বাবা থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

তাসফিয়া নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের গ্রামের বাড়ি টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকায়। তাসফিয়া পরিবারের সঙ্গে নগরীর ওআর নিজাম আবাসিক এলাকার তিন নম্বর সড়কের কেআরএস ভবনে থাকতো। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার (০১ মে) সন্ধ্যায় তাসফিয়া তার ছেলে বন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে রেস্টুরন্টে খেতে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই দিন রাতে তাসফিয়ার বন্ধু আদনানকে আটক করে। ঘটনার পরদিন ৩ মে দুপুরে এ ঘটনায় তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদনানকে প্রধান করে ওই মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সোহেল (১৭), শওকত মিরাজ (১৭), আসিফ মিজান (১৭), ইমতিয়াজ ইকরাম (১৭) ও ফিরোজ (৩০)।

এর মধ্যে আদনান, আসিফ, ফিরোজ, মিরাজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও আদনান ছাড়া অন্যরা জামিনে বেরিয়ে যান। আদনানকে গাজিপুরের শিশু পরিবারে রাখা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর