রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টার ‘ভুল ব্যাখ্যা’ না দেয়ার আহ্বান

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-21 12:15:56

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ‘ছোট করা’ বা ‘ভুল ব্যাখ্যা’ না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। অস্থায়ীভাবে আশ্রয় পাওয়া এসব নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এই পর্যায়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের উপর চাপ দেওয়া, কারণ এটাই এই সঙ্কটের একমাত্র টেকসই সমাধান। একই সঙ্গে সবাইকে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ছোট বা ভুল ব্যাখ্যা না করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাই।

রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলি তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে আমরা সেই আহ্বান জানাবো।

ভাসানচরে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় গিয়েছেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভূমিধ্বস ও অন্যান্য ঝুঁকি থেকে উত্তরণে কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরের চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ প্রথম ধাপে কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে এক হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ১০ লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী আবাসন কক্সবাজারের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। এখান থেকে তাদের সরানো অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হতাশায় নিমজ্জিত এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপ হতে থাকায় নিজস্ব পরিকল্পনা এবং নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরকে তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে কারণে সরকার সেখানে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।

১৩ হাজার একরের এই দ্বীপে রয়েছে সমস্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে বছরব্যাপী মিঠা পানির সরবরাহ,  যথাযথ অবকাঠামো এবং উন্নত সুবিধা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, কৃষি প্লট, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, দুটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, গুদাম, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা, থানা, বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র, খেলার মাঠ ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাঁধ ও অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহিলা পুলিশসহ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে দ্বীপে পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। অঞ্চলটি পুরোপুরি সিসিটিভি ক্যামেরায় আচ্ছাদিত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি প্রত্যাবাসনের বিস্তৃত পরিকল্পনার একটি অংশ। যা বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র অগ্রাধিকার। ভাসান চরে রোহিঙ্গারা যে জীবনযাপন করবে, পরবর্তী মিয়ানমারে ফিরে তারা তা কাজে লাগাতে পারবে। রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে মাছ ধরা, কৃষিকাজ, ছাগল পালন ইত্যাদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করত। তারা সেগুলো ভাসানচরেও করতে পারবে।

মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে একটি আধুনিক দ্বীপে নিয়ে যাওয়াকে বিশ্বে ‘মানবতার অনন্য’ উদাহরণ হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর