সেতুতে উঠতে বাঁশই ভরসা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 20:25:06

রংপুর: দশম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র কবির হোসেন। বইখাতার ব্যাগ কাঁধে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছে স্কুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পথে বাঁধা ১৮ ফুট উচ্চতার হিমালয়! নিচ থেকে এতো উপরে উঠতে তাকে সাহায্য করছিল সহপাঠী আবু সুফিয়ান। এর মধ্যে দুইবার পা পিছলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার। ভয়ে কাঁপছিল। বেশ কষ্ট করেই সাইকেল নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উপরে উঠল ওরা। এ সময় কবির হোসেনের সঙ্গে কথা বলে বার্তা২৪কম।

কবির বার্তা২৪.কমকে জানায়, প্রতিদিনই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ওঠা-নামা করতে হয়। কারণ মূল সড়ক দিয়েই স্কুলে যেতে হয় তাকে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় প্রতিদিনই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।

কবিরের সঙ্গে কথা বলার সময় চোখে পড়ে এক বৃদ্ধকে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ার কারণে ওই উপর থেকে নিচে নামতে কাঁপছিলেন তিনি। অন্যের সহযোগিতায় নিচে নামেন তিনি। এ সময় কথা হয় ওই বৃদ্ধ আবুজার রহমানের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, দিনে কয়েকবার বাঁশ বেয়ে নতুবা অন্যের হাত ধরে নিচ থেকে উপরে উঠতে হয়। গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর মূল সড়কে উঠতে হলে ১৮ ফুট নিচ থেকে ওঠা ছাড়া উপায় নেই। এভাবেই বিগত ৫ বছর ধরে যাতায়াত করছেন তিনি।

এখানে কথা হয় কৃষক সিরাফুল হকের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, যাতায়াতের জন্য বাঁশই তাদের ভরসা। কৃষি পণ্য নিয়ে যাওয়া-আসাতে উপরে উঠতে ও নিচে নামতে বাঁশ ব্যবহার করেন। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে ওঠা নামা করতে হয়। বাঁশ ধরেই উপরে উঠে মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে মেডিকেলে যেতে হয়। এতো নিচ থেকে মূল সড়কে উঠতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ভোগের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানেন। তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু কাজ হয় না।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইছলি গ্রামের নিত্যদিনের দুর্ভোগের চিত্র এটি। নদী ভাঙনের কবলে ভিটে মাটি হারিয়ে এই গ্রামে ঠাঁই নিয়েছেন সিরাফুল হক। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে তার মতো এখন অনন্ত ২ শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। সকলে মিলে গড়ে তুলেছে একটি সবুজ গ্রাম।

রংপুরের গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীর অববাহিকায় ছোট্ট এই গ্রামের অবস্থান। এটি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইছলি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালে তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে স্থানীয়রা এই গ্রামটি গড়ে তোলে।

পশ্চিম ইছলি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। একটি মাত্র পিচঢালা রাস্তা রয়েছে এই গ্রামের পাশে। সেই রাস্তাটি গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুতে ওঠার সংযোগ সড়কের প্রায় ১শ গজ আগে শেষ হয়েছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা রাস্তা না থাকায় মাটির তৈরি আঁকা-বাঁকা রাস্তা বেয়ে মূল সড়কে উঠতে প্রায় ১৮ ফুট উঁচুতে তাকাতে হয়। নিচ থেকে ১৮ ফুট উঁচুতে উঠলেই শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক। এই সড়কে উঠতে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৮ ফুট নিচ থেকে উপরে উঠতে হয় পশ্চিম ইছলি গ্রামের লোকজনকে।

সেতু নির্ভর এই গ্রামের লোকজনকে নিচ থেকে উপরে উঠতে বেশির ভাগ সময়ই বাঁশ ব্যবহার করতে হয়। বাঁশ ধরে ধরে উপরে উঠতে এবং নিচে নামতে হয় ছোট শিশু-বৃদ্ধদেরও। এতে অনেক সময় ঘটছে উল্টে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেতুতে উঠতে বাঁশের ওপর ভরসা করেই চলছে পশ্চিম ইছলির মানুষ।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আমি গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছি। সমস্যার কথা পরিষদে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই গ্রামের মানুষের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হবে।’

অন্যদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমীম নাহার বলেন,‘পশ্চিম ইছলি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের কষ্টের বিষয়টি আমি জানি। মাত্র ১শ গজ জায়গায় মাটি ঢালু করে দিলেই তারা সহজে যাতায়াত করতে পারবে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর