পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত

, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 22:26:15

মাওয়া থেকে জাজিরা নদীতে দাঁড়িয়ে আছে ৪২ পিলার তার ওপরে বসেছে ৪১ ইস্পাতের স্প্যান এভাবেই পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়াল ৬.১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের বহুমুখী পদ্মা সেতু। তবে সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হওয়ার প্রক্রিয়াটা এত সহজ ছিল না। সেতুর বাকি কাজ শেষে আগামী এক বছরের মধ্যেই সেতু উপরে চলবে যানবাহন।

তবে অনেক নাটকীয়তা ও টানটান উত্তেজনায় মোড়ানো ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প। প্রথম যখন বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক অর্থ ছাড়ের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ বহু ঘটনার পর নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেই সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলো। তবে সাথে ছিলো সেতু নির্মাণের বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুর চ্যালেঞ্জ আজ বাস্তবায়ন হলো।

সবশেষ বসানো হলো ৪১ তম স্প্যান

২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর নদীশাসনের জন্য চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে।এ ছাড়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করেছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তারপর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবয়ব পেতে শুরু করে প্রথম ২০১৭ সালে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান। ২০১৭ থেকে ২০২০ গত তিন বছরের চেষ্টায় পদ্মা সেতুতে বসছে ৪১ টি স্প্যান। যার ফলে এখন যুক্ত হয়েছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং শরীয়তপুরের জাজিরা অংশ।

পূর্ণাঙ্গ অবয়বে পদ্মা সেতু

নকশা সংশোধন ও নদীশাসনের বিলম্বের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছিল। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং বন্যার স্রোতের কারণে প্রায় চার মাস পদ্মা সেতুতে বসানো যায়নি কোন স্প্যান । ফলে সেতুর কাজ আরেক দফা পিছিয়ে যায়। সব জটিলতা কাটিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে সবগুলো স্প্যান তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ তার ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী ৩২ এবং ৩৩ নাম্বার পিলারের ওপর বসেছে ২১ তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ৫ এবং ৬ নাম্বার পিলারের ওপর বসেছে ২২ তম স্প্যান, ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে বসেছে ২৩ তম স্প্যান, ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪ তম স্প্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৫ তম স্প্যান, ১০ মার্চ বসেছে ২৬ তম স্প্যান, ২৮ মার্চ বসেছে ২৭ তম স্প্যান।

গত দুই মাসে বসানো হয়েছে ১০ টি স্প্যান

১১ এপ্রিল বসেছে ২৮ তম স্প্যান, ৪ মে বসেছে ২৯ তম স্প্যান, ৩০ মে বসেছে ৩০ তম স্প্যান, ১০ জুন বসেছে ৩১ তম স্প্যান, ১১ অক্টোবর ৩২ তম, ১৯ অক্টোবর ৩৩ তম, ২৫ অক্টোবর ৩৪ স্প্যান, ৩১ অক্টোবর বসছে ৩৫ স্প্যান, ৬ নভেম্বর ৩৬ তম, ১২ নভেম্বর ৩৭ তম, ২১ নভেম্বর ৩৮ তম স্প্যান, ২৭ নভেম্বর ৩৯ তম, ৪ ডিসেম্বর ৪০ তম স্প্যান এবং সবশেষ ৪১ তম স্প্যান বসানো হলো আজ ১০ ডিসেম্বর।

এদিকে,স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে বাংলাদেশে আনার পর। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্প্যানের অংশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে স্প্যানের অবয়ব তৈরি করা হয়। তারপর সেগুলোকে নির্ধারিত পিলারের উপর বসানোর জন্য। স্প্যানটি বহন করে পৃথিবীর সবচয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ানই। পুরো প্রক্রিয়াটি বলা যায় একটা মহাযজ্ঞ।

পদ্মা সেতু

সেতুতে মোট পিলার আছে ৪২টি। একটি পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হয়েছিলো।সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো আছে বলে জান যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর