ভালো নেই হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের বিদ্যাপিঠ!

ময়মনসিংহ, জাতীয়

মো. জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:24:24

 

ভালো নেই নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। হুমায়ূনের নিজ গ্রাম নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে ৩ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপীঠের বয়স একযুগ পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি পড়েনি। অত্যন্ত দৈন্যদশার মধ্য দিয়ে চলছে বিদ্যাপীঠটি। দীর্ঘদিন হলেও বিদ্যালয়টি এমপিভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিদ্যালয় ভবনের ছাদের ঢেউটিন ভেঙে ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। তাই বর্ষাকালে বিঘ্নিত হয় পড়ালেখার কার্যক্রম।

হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে সরকারের অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে নানা রকম আশ্বাস দিলেও বর্তমানে আর বিদ্যালয়টির খোঁজ নেন না কেউই।

তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে যায়নি হুমায়ূনের রেখে যাওয়া স্বপ্নের স্কুলের কার্যক্রম। হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পর তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বিদ্যালয়টি পরিচালনার হাল ধরেন এবং তিনি নিজেই বিদ্যালয়টি পরিচালনার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে যাচ্ছেন।

 বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন, বিশিষ্ট অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর (বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী)। ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের পর মেহের আফরোজ শাওনের করা নকশা অনুযায়ী শুরু হয় ভবন নির্মাণের কাজ। দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের পাঠদান কার্যক্রম।

বিদ্যালয় ভবনে রয়েছে, মোট ১৪টি কক্ষ। এর মধ্যে ১২টি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি কক্ষে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ নামে বিশাল পাঠাগার। এছাড়া অন্য একটি কক্ষ অফিস রুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর তাদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছে ১৫ জন এবং কর্মচারী রয়েছে ৩ জন।

বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ২০১০ সালে আমি হুমায়ূন স্যারের হাত ধরে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি। স্যার বিদ্যালয়টি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি আমাদের বলতেন, “তোমরা দেখে নিও, এ বিদ্যালয় একদিন সারাদেশে হইচই ফেলে দেবে। শহরের শিক্ষার্থীরাও একদিন এ স্কুলে লেখাপড়া করতে ছুটে আসবে।” কিন্তু এরই মাঝে স্যার না ফেরার দেশে চলে যান। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি স্যারের সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য।

বিদ্যালয়ের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতভাগ ফলাফল অর্জন করে আসছে। ২০১৭ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ৬৫ জন  শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করে ৪০ জন। এ বছর (২০১৮) এসএসসি পরীক্ষায় ৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হয় এবং জিপিএ-৫ অর্জন করে ৯ জন।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সব সময়ই শতভাগ রেজাল্ট করে আসছি। জেলা পর্যায়েও আমাদের প্রতিষ্ঠান শ্রেষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়টি অদ্যাবধি এমপিওভুক্ত হচ্ছে না। বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা জরুরি বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর