গাংনীতে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 04:22:10

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহব্বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা ভেবে ৮১ লাখ টাকা ব্যায়ে সরকারি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটিকে নিছক ভুল বলে দাবি করলেও প্রকৃত জমির মালিকরা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ও আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের জায়গার সাথেই ব্যক্তিমালিকানা জায়গা। ভবন নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ কাজে জমির কাগজপত্র ও অবস্থাণ নির্ণয় না করেই নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল ভবন।

জানা গেছে, সরকারি জমির দখল-বেদখল আছে কি না সে বিষয়ে প্রতি বছরই সরকার নির্ধারিত ফরমের ছক পূরণ করে অধিদপ্তরে প্রেরণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যার কপি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে সংরক্ষিত থাকে। জমির বেদখলের বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ নিশ্চিত করেন। সরকার প্রতি বছরই সরকারি এ সম্পত্তির জন্য খাজনা পরিশোধ করে। সরকারি ভবন নির্মানের আগে প্রধান শিক্ষক নিয়মানুযায়ী জমি বেদখল বা কাগজপত্র বিদ্যালয়ের অনুকূলে আছে কি না নিশ্চিত করেন প্রধান শিক্ষক। এ নিশ্চিতপত্র পাওয়ার পরেই ভবন নির্মানের অর্থ বরাদ্দ হয়। তাহলে প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান কেন ভূয়া তথ্য দিয়ে সরকারি প্রায় কোটি টাকার অর্থ ঝুঁকির মধ্যে ফেললেন তা নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

অপরদিকে এ অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিরাট অব্যবস্থাপনা বিরাজের অভিযোগ রয়েছে সেই সমালোচনা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, চাহিদা ভিক্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ও এলজিইডির বাস্তবায়নে ৮১ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৭ টাকা ব্যায়ে মহব্বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৬ মাস আগে। কাজটি পান ঝিনাইদহ কাঞ্চননগরের নিশিতবসু কনস্ট্রাকশন। কাজটির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দেখা দিয়ে বিপত্তি। প্রকৃত জমির মালিকগণ এসে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তখন টনক নড়েছে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জমির মালিক প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুল খালেক জানান, যে জমিতে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি চার শরিকের। যার মৌজা মহব্বতপুর ১৪৩ নং খতিয়ানের ১৮২ দাগ। জমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ। এ জমির পেছনের দিকের ৫৭ নং খতিয়ানের ১৮৩ নং দাগে বিদ্যালয়ের জমি রয়েছে ১৫ শতাংশ। প্রধান শিক্ষককে জমি বিনিময়ের ব্যাপারে অনেকবার বলা হলেও কোন কর্ণপাত করেননি। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও বারবার বিষয়টি উপক্ষো করেছেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে জমির শরিকগণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদেরকে কাজ করতে নিষেধ করেছেন। ফলে বন্ধ হয়েছে নির্মাণ কাজ। বিষয়টি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, এটি নিছক ভুল হয়েছে। জমিটি বিনিময় করলে সব সমস্যার সমাধান হবে। এটি সময়ের ব্যাপার। তবে জমির শরিকরা বিনিময় করতে নারাজ।

বিদ্যালয়ের সভাপতি শহীদ সরওয়ার জানান, বিদ্যালয়ের কাজ শুরুর পরে তিনি সভাপতি হয়েছেন তাই জমিজমারবিষয়টি তার অজানা।

গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দিন জানান, জমির ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই। তবে জমির কাগজপত্র না দেখে ভবন নির্মাণ কাজ কখনও সঠিক হয়নি। বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায় তার পথ খোজা হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে রহমান জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। আর কোন কথাও বলতে চান না।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান  জানান, এটি নিছক ভুলের বিষয় নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর